জেরার মুখে ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপসহ ৫ প্রতিষ্ঠান
বেশি দামে চাল, আটা-ময়দা, ডিম, মুরগি, সাবান বিক্রির অভিযোগে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করে।
তাদের মধ্যে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সিটি গ্রুপ, ইউনিলিভার, এডিবল ওয়েল, রশিদ অ্যাগ্রো ফুড, বেলকন ফুড. প্যারাগন গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী আড়ৎদার বহুসুখী সমবায় সমিতির সভাপতিকে জেরার মুখে পড়তে হয় মামলার শুনানিতে।
রাজধানীর ইস্কাটন রোডে প্রতিযোগিতা কমিশন অফিসে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে কমিশন থেকে ওই সব কোম্পানির বিরুদ্ধে অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এর বিভিন্ন জবাব চাইলে কোনো কোম্পানিই সঠিক জবাব দিতে পারেনি। ইউনিলিভার সময় চায় আট সপ্তাহ, কেউবা চার সপ্তাহ। এভাবে সবাই সময় চায় শুনানিতে।
চালের ব্র্যান্ডের ব্যাপারে চানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। বিআর-২৮, জিরাসাইল, নাজিরসাইল থেকেই চিকন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সময় কশিমন থেকে বলা হয়েছে ভোক্তারা শুধু বিভ্রান্তি নয়, প্রতারিত হচ্ছে। কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে প্যাকেটজাতের নামে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ করা হয় বেলকন গ্রুপের কাছে। এর কারণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু এর সব তথ্য সরবরাহ করতে না পারায় কোম্পানির আইনজীবি ব্যারিস্টার সিনথিয়া সময় চান। এ সময় কমিশন ১৩ অক্টোবর সব তথ্য নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
চাল এবং আটা ময়দার দাম বৃদ্ধির ব্যাপারেও একই অভিযোগ করা সিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে। এ সময় সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা তার আইনজীবি নিয়ে কমিশনে হাজির হয়ে বলেন, আমাদের সব তথ্য আনা হয়নি। সময় দেওয়া হোক। তখন ১৩ অক্টোবর কমিশন থেকে সব তথ্য আনতে বলে সিটি গ্রুপকে। একই সঙ্গে আমদানিকৃত দেশ থেকে গম আমদানির যাবতীয় ডকুমেন্টও আনতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল কোম্পানি থেকেও মহাব্যবস্থাপক শুনানিতে হাজির হয়ে বলেন, নাজিরসাইল ও বিআর-২৮ ধান থেকে পলিশিং করে মিনিকেট চাল প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করা হয়। বিস্তারিত তথ্য সরবরাহে সময় চাইলে এ সময় কমিশন থেকে ৬ অক্টোবর সব তথ্য আনতে বলা হয়েছে।
রশিদ এগ্রো ফুডের বিরুদ্ধেও চালের মূল্য অস্বাভাবিভাবে বৃদ্ধি করে আইন লংঘন করেছে। যা অপরাধ বলে অভিযোগ করা হয়। এ সময় রশিদ গ্রুপের মানেজার শেখ শহিদুজ্জামান বলেন, ‘পরিবহন, তেলসহ বিভিন্ন কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জিরাসাইল ও বিআর-২৮ থেকে মিনিকেট চাল করা হয়। তবে দক্ষিণাঞ্চলেও কিছু মিনিকেট ধান পাওয়া যায় বলে তিনি দাবি করেন। অন্যান্য তথ্য দিতে সময় চান তিনি।
এ সময় কমিশন থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে কোন ভ্যারাইটি থেকে কোন ব্র্যান্ড চাল করা হয়েছে। এ ছাড়া, গত তিন বছরের আয়-ব্যয়সহ অন্যান্য তথ্য নিয়ে ১৩ অক্টোবর কমিশনে হাজির হতে বলা হয়।
শুনানিতে ডিম ও্র মুরগির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য প্যারাগন কোম্পানির বিরুদ্ধেও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে বিক্রি করি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করি না। সব তথ্য নেই। তাই তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হোক।’
এ সময় কমিশন থেকে বলা হয় প্যারাগন ব্রাউন এবং ওমেগা নামে বাজারে বেশি দামে যে ডিম বিক্রি করা হচ্ছে তা বিএসটিআই বা সাইন্সল্যাবলেটরি থেকে পরীক্ষা করে সার সার্টিফিকেট, গত তিন বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ অন্যান্য সব তথ্য দিতে হবে।
বেশি দামে ডিম বিক্রির অভিযোগে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী আড়ৎদার বহুসুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহর বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। শুনানিতে তারে বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজী ফার্মস সকাল আটটাই ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এই দামও প্যারাগন, সিপি, পিপলস, ইউনাইটেডসহ অন্যান্য কোম্পানি বেঁধে দেয়। সেই দামই ৫ থেকে ৬ হাত বদল হয়ে বাজারে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি হয়। তবে আমরা সেই ডিম পাই না। তাদের ডিলাররা বিক্রি করে। আমরা টাঙ্গাইল থেকে ডিম আনি। অন্যান্য তথ্য চাইলে তার আইনজীবি সময় চান এক মাস।
এ সময় কমিশন থেকে বলা হয়েছে, ১৫ ধারায় অভিযুক্ত। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে কিভাবে সর্বোচ্চ দাম হয়েছে তার তথ্য ১৬ অক্টোবর জানাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সাবানের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার অভিযোগে ইউনিলিভারের বিরুদ্ধেও কমিশন মামলা করেছে।
মঙ্গলবার তার শুনানিতে কোম্পানির পক্ষে আইনজীবি মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, এই মামলার কিছু পাওয়া যায়নি। তাই বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব নয়। আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হোক। প্রত্যেক পণ্যের মার্কেট শেয়ারসহ আটটা প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে তা দেওয়া সম্ভব নয়।
এ সময় কমিশন থেকে বলা হয়েছে. গত তিন মাসে ইউনিলিভারের সাবানসহ সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ এর পরিপন্থি। সময় বেশি চাইলে কমিশন থেকে ১৬ অক্টোবর সব তথ্য নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বেশি দামে চাল বিক্রি করার অভিযোগে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন প্রাণ, ব্রাক, সিটি, স্কোয়ার, রশিদ, এরফানসহ চালের ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আটা-ময়দাও বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগে মেঘনা, আকিজ, বসুন্ধরা, এস আলম, টিকে গ্রুপসহ আটটি, বেশি দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি করায় সিপি, প্যারাগন, নারিশসহ ১২টি কোম্পানি এবং সাবান, গুঁড়া সাবান ও সুগন্ধী সাবানও বেশি দামে বিক্রি করায় ইউনিলিভার, এসিআই, কেয়া, কোহিনুর, স্কোয়ারের নামেও মামলা করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন নামীদামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন।
জেডএ/এমএমএ/