ডিমের বাজার কারসাজির শাস্তি চায় এফবিসিসিআই
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে পোল্ট্রি খাতের লোকজন ভোক্তাদের পকেট থেকে ৫২৩ কোটি টাকা কেটে নিয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে উল্লেখ করেন এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট মো. জসীম উদ্দীন।
তিনি বলেছন, ‘এটা কেন হলো? যদি তাই না হয়, তাহলে অভিযানের পর কেন আবার প্রতি ডজন ডিমের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমে গেল। তেলের দামের অজুহাতে বাড়ানো হলো ডিমের দাম। সরকার ধরাধরি করলে প্রতিপিসে তিন টাকা, চার টাকা কমে গেল। এই সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া দরকার। দেশে তো আইন আছে। তা মানতে হবে।’
সোমবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আয়োজিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীর বাজার ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজিকে বলব, এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। কারণ, হঠাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে ২-৩ দিনে। তা হতে পারে না। ব্যক্তিকে দেশের চেয়ে বড় করা যাবে না। করপোরেট হোক আর যে হোক, শাস্তির আওতায় আনতেই হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, আমিও করপোরেট। কিন্তু আমি কি আইন কানুন মেনে ব্যবসা করব না। অবশ্যই আইন মানতে হবে। ভোক্তার ডিজি আছেন, তাকে বলব যারাই জড়িত শাস্তির আওতায় তাদেরক আনতে হবে। কারণ, দুই শতাংশের অপবাদ ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ীরা নিতে পারি না।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করব। কিন্তু সুযোগ পেলে যা ইচ্ছা করব তা হবে না। মিডিয়া এভাবে তুলে ধরছে বলেই আমরা জানতে পারছি যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ পেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। পোল্ট্রি খাতে বড় ব্যবসায়ী আছেন, ছোট ব্যবসায়ী আছেন। তাদের কোনো সমস্যা থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ডিম খাতের ব্যবসায়ীরা যদি মনে করেন ডিমে ১৪-১৫ টাকা উৎপাদন খরচ হবে। তাহলে ভারত থেকে আমদানির কথা ভাবতে হবে। তার মানে এই নয় যে স্থানীয় শিল্পকে আমি চাই না। তবে এটা স্পষ্ট বলব, সুযোগ পেলে সুযোগের সৎ ব্যবহার করবেন না।’
ডিমের দাম একদিনে তিন টাকা বেড়ে গেল। কিন্তু ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযানে গেলে আবার কমে গেল। এটা ফাইন্ড আউট করতে হবে। শুধু তিন চার দিনে ৪০০ থাকে ৫০০ কোটি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে নিয়ে নিল।
সাপ্লাই-ডিমান্ডের এমনকি ঘটল যে ওই দুই দিন এক কাজী ফার্মের ডিলার সালাউদ্দিন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এ ঘটনা ঘটালেন তাহলে কাজী ফার্ম কোথায়?
এই ঘটনা ঘটিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়া নেবে তা হতে পারে না। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে অন্যরা এ সুযোগ আর নিতে না পারে। দাম নির্ধারণে একটা নীতিমালা করে নিয়ন্ত্রণ হওয়া দরকার, তিনি বলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে আমাদের ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব আছে এর দাম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে। দেখতে হবে কারা দাম বাড়াচ্ছে। স্থানীয় কারণে, না আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব পড়ছে, তা দেখতে হবে।
ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, যখনই পন্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতাময় করা হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে তেল থেকে শুরু করে চাল, ডিমের ঘটনা একইভাবে ঘটানো হয়েছে। বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে যা কাঙ্ক্ষিত না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এত দাম বৃদ্ধি কখনো ঘটেনি। এবার ডিমের ব্যবসাতে তারা দেখিয়ে দিল। কিন্তু কেন? কিসের ভিত্তিতে এত দাম বাড়ল এর জবাব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট খামার, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের।
যেভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে তা ডিজেলের কারণে বাড়েনি। যেভাবে বাড়ানো হয়েছে তা নৈতিকতার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের নেতা না। দুই শতাংশ ব্যবসায়ীদের জন্য অপবাদ নিতে চাই না।
এই অসাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেকোনো ব্যবস্থা নেবে, আমরা তাদের সহায়তা করব। সমবায় সমিতি করে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে, এ ক্ষমতা তাদেরকে দিয়েছেন কে।
এফবিসিসিআই থেকে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও দেওয়া হয়নি। তাহলে তারা কী করে ব্যবসা করছে? প্রতিটা ডিমে ২ টাকা ৭০ পয়সা একদিনে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে এফবিসিসিআই সব সময় পাশে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে।
আমাদের কাছে তথ্য আছে জ্বালানি তেলের কারণে মাত্র ৩০ পয়সা দাম বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাড়ানো হয়েছে অনেক অনেক বেশি। আমরা হালাল ব্যবসা করতে চাই, নৈতিকতার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জেডএ/এমএমএ/