‘এভাবে দাম বাড়লে পান্তাও খেতে পাব না’
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাশাপাশি বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। সব কিছুর দাম বাড়ার বিষয় নিয়ে ক্রেতারা বলছেন, আয়-রোজগার না বাড়ায় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সবজি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম।
এক সপ্তাহে ৪০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা ছুঁয়েছে। বয়লার মুরগিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াই ক্রেতারা বলছেন, আমাদের আয় রোজগার বাড়েনি কিন্তু দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে। যা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রথমবারের মতো ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম ১৪৫ টাকায় উঠেছে। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবধরনের সবজি। তবে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমেছে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর পলাশী মোড়ের বাজার ঘুরে এসব জানা গেছে।
দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২০০ টাকা। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ১৯০ টাকা কেজিও বিক্রি করছেন। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছে, বয়লার মুরগি বিক্রি করতে গেলে ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। তাদের বোঝা উচিত মুরগির দাম তো বাড়ানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। অন্যরা যা বিক্রি করছে আমরাও তাই বিক্রি করছি।
ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে পলাশী বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম এমনিতেই বাড়তির দিকে ছিল। তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সেই দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে। পাইকারিতে প্রতিদিনই ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৫০ টাকা হয়ে যেতে পারে।
পলাশী বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম। এর সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম এমনটি বেড়ে গেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণে সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম না বাড়লে মুরগি আর একটু কম দামে পাওয়া যেত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
এদিকে, বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। পলাশী বাজারে মুরগি ক্রেতা শানু বেগম বলেন, গত কয়েকদিনে মুরগির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।
ক্রেতা জয়নাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, গত সপ্তাহে এক ডজন লাল ডিম ১২৫ টাকায় বিক্রি করেছি। তেলের দাম বাড়ানোর পর গত কয়েকদিন হুটহাট ডিমের দাম বেড়েছে। এখন এক ডজন ডিম ১৪৫ টাকা বিক্রি করছি। আমি ৮-১০ বছর ধরে ডিমের ব্যবসা করছি। এর আগে কখনো ডিম এত দামে বিক্রি করিনি।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। তবে কেউ এক কেজি কিনলে ১৯০ টাকা রাখা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি হয় ৪০ টাকা।
দেখা গেছে, শিমের পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকা টমেটোর। গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর গাজর গত সপ্তাহের মতো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বরবটিও গত সপ্তাহের মতো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে শসার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসা এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পলাশী বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে। এর মূল কারণ তেলের দাম বাড়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
ডিম, মুরগি ও সবজির দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। তবে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমে কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৩০০ টাকায় উঠেছিল।
এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা। শিং মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা, কৈ মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ইলিশও।
মাছ ব্যবসায়ী রফিক বলেন, আগের তুলনায় প্রায় সব মাছের দাম বেড়েছে। এ কারণে ক্রেতাদেরও চাহিদা কমেছে।
পলাশী বাজারের বাজার করতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফ কোয়াটারের শাহ আলম মিয়া। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, দৈনন্দিন প্রয়োজনে জিনিসপত্রের দাম যদি এভাবে বেড়ে যায় তাহলে আমাদের মতো মানুষের জিনিসপত্র কিনে খাওয়া খুব কষ্টকর হবে।
পলাশী বাজারে আজিমপুর থেকে বাজার করতে আসা ক্রেতা মামুন হোসেন বলেন, মুরগিসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে শুধু পান্তা ভাত খেতে হবে তাও একসময় পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশী বাজার কমিটির আহ্বায়ক নজরুল মিয়া বলেন, আমরা পলাশী বাজারে ক্রেতাদের আনতে প্রতিনিয়ত জিনিসপত্র দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে বিক্রি করি। সম্প্রতি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গিয়েছে। এজন্য আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম যদি কমে যায় তাহলে আবারও জিনিস কত দাম কমে যাবে মনে হয়।
কেএম/এসএন