নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিক্রি কমেছে খুচরা বাজারে
জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে। নিত্যপণ্যের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওযায় খুচরা পর্যায়ে বিক্রি কমেছে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ানবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তাদের সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
কারওয়ানবাজার থেকে ৫ লিটারের সয়াবিন তেল কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি ঢাকাপ্রকাশের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত সপ্তাহে ৫ লিটারের সয়াবিন তেল কিনেছিলাম ৮৮০ টাকা দিয়ে। আজ কিনতে হলো ৯১০ টাকা দিয়ে। ৩০ টাকা বেশি নিল। যদিও সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির কোনো ঘোষণা আসেনি। শুধুমাত্র দাম সমন্বয় প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন বলেন, যেটা চলছে বাজারে সেটা হলো মূল্যসন্ত্রাস। সরকারের ব্যবসায়ীদের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী সকালে এক কথা বলেন বিকালে আরেক কথা। কোনো বেচাকেনা নেই। সকাল থেকে বসে আাছি।
বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মফিজ বললেন, মানুষের কাছে টাকা কই? মানুষের ইনকাম আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু খরচ বেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে। সেই কারণে মানুষ ওই টাকার মধ্যেই কিনছে। কিন্তু পণ্য পাচ্ছে কম।
কারওয়ানবাজারেই কথা হয় আইএফআইসি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব। সব সুবিধা ব্যবসায়ীদের দিচ্ছে। ফলে মারা পড়ছে জনগণ। ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ কমিয়ে ১৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে এনেছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে তলানিতে নিয়ে গেছে। এখন সঞ্চয়পত্রের সুদ দিয়ে হয় না।আমাদের মতো অবসরপ্রাপ্ত মানুষজনের শেষ ভরসা ছিল সঞ্চয়পত্র। সেটার উপর দিয়ে আর চলছে না। সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম বলেন, এভাবে চললে আগামীবছর দেশে দুর্ভিক্ষ লাগবে। দেশের এই অবস্থার মধ্যে প্রকৃতিও বিরূপ। বৃষ্টি নেই। বৃষ্টি আগামী মাসে না হলে ধান হবে না। তখন ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হবে।
আরেকজন খুচরা ব্যবসায়ী বিপু জানালেন, সব পণ্যের দামই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে। কিন্তু আমাদের কোনো লাভ নেই। উল্টো বিক্রি কমে যাওয়ায় আমাদের লাভ আগের চেয়ে কমেছে। এই অবস্থায় আমরা কীভাবে চলব? সামনে শুধু অনিশ্চয়তা। সব লাভ নিয়ে যাচ্ছে ডিলার, পাইকার আর আমাদনিকারকরা।
এমন অভিযোগ সম্পর্কে পুষ্টি সয়াবিন তেলের ডিলার আঁখি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন দিপু ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, দাম যখন কমে তখন খুচরা ব্যবসায়ীরা বোতলের গায়ের দামেই বিক্রি করে। কিন্তু দাম যখন বেড়ে যায় তখন তাদের লাভ কমে। তখন তারা এমন অভিযোগ করে। দাম বাড়লে আমাদেরও লাভ থাকে না তেমন। আমাদেরও তো কোম্পানি বর্ধিত দামেই মাল দেয়।
আরইউ/আরএ/