বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি
কর প্রশাসন সহজীকরণ, রেমিট্যান্স গাইডলাইন, যথাযথ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দক্ষ জনশক্তি হলো মূল বৈশিষ্ট্য যা দেশে আরও বেশি বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জট কমানো এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
রবিবার (১২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকউন্ট্যান্ডস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা একথা বলেন। যৌথভাবে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএবি সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন এফসিএ এবং জেবিসিসিআই সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, আইসিএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট এন কে এ মবিন এফসিএ, সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিল সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ এফসিএ, আদিব হোসেন খান এফসিএ, কাউন্সিল সদস্য মো. আব্দুল কাদের জোয়াদ্দার এফসিএ, মারিয়া হাওলাদার এফসিএ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বোস, জেবিসিসিআই সাধারণ সম্পাদক জাজালুর হাই, জেট্রো ঢাকা অফিসের চিফ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো এবং মারুবেনি করপোরেশন, ঢাকা অফিসের জেনারেল ম্যানেজার হিকারি কাওয়াই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইসিএবির সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিল সদস্য মো. হুমায়ুন কবির এফসিএ অধিবেশন পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি আশা করেন যে আইসিএবি এবং জেবিসিসিআই ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করতে সহযোগিতা করবে যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সময় আরও সুবিধা উপভোগ করতে পারে। আইসিএবি এবং জেবিসিসিআই নীতিনির্ধারকদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে একত্রিত হবে এবং এই উদ্দেশ্যে অত্যন্ত কৌশলগত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বল মনে করেন ইতো নাওকি।
ইতো নাওকি বলেন, মহামারির সময় থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। আমাদের সকলের উচিত আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম মেনে চলা।
বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে এক, দুই বা তিন বছর পর ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে হয় যা বাস্তবসম্মত নয় মন্তব্য করে জাপানের রাষ্ট্রদূত এটি একবারের জন্য করা উচিত বলে মত দেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যা জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, তা এফডিআই আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে দেশে একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
আইসিএবি সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন এফসিএ বলেন, জাপান বাংলাদেশকে সফলভাবে এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনে নিরন্তর সহযোগিতা করে আসছে। বর্তমানে প্রায় ৩২০টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা ও জ্ঞান স্থানান্তরের মাধ্যমে ভৌত পুঁজি গড়ে তোলার জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এমন অভিমত ব্যক্ত করে আইসিএবি সভাপতি বলেন, ২০২২ সালে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৩ সালে আড়াই বিলিয়ন ডলার আনার লক্ষ্য বাংলাদেশের। আইসিএবি বিশ্বাস করে এই লক্ষ্য অর্জনে জাপানি উদ্যোক্তারা অনেক অবদান রাখবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ভূমিকা তুলে ধরে আইসিএবি সভাপতি বলেন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর পরিকল্পনা, যথাযথ সম্মতি এবং কর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সহজ করার জন্য জড়িত।
জেবিসিসিআই সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী বলেন, দেশের প্রশাসনে যথাযথ সংস্কারের ব্যবস্থা প্রয়োজন। দেশে আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমলাতান্ত্রিক জট কমানো এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
বন্দর সেবার দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে আসিফ এ চৌধুরী বলেন, ব্যবসায় সহজ করার জন্য ভৌত সুবিধার উন্নতি এবং শ্রম ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থায় সংস্কারের পাশাপাশি কাস্টম ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি সহজ করতে হবে। তিনি বেসরকারিকরণ, ব্যবসায়িক আইনের আধুনিকীকরণ, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার নীতি ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশও দেন।
জাতীয় বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে আইসিএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট এন কে এ মবিন এফসিএ একই মতামতকে প্রতিধ্বনিত করেছেন এবং দেশের কর রাজস্ব প্রশাসনের সরলীকরণ এবং দেশে আরও এফডিআই আকর্ষণ করার জন্য যথাযথ অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান।
জেট্রো ঢাকা অফিসের চিফ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে বিদেশি কোম্পানির লিয়াজোঁ ও শাখা অফিসের জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এতে আরও সময় লাগবে এবং উদ্যোক্তারা ভ্যাট নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অসুবিধার সম্মুখীন হবেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে নির্দ্বিধায় দেশে আরও বিনিয়োগ করতে পারেন সেজন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এই বিধান বাদ দিতে হবে।
মারুবেণী করপোরেশন, ঢাকা অফিসের মহাব্যবস্থাপক হিকারি কাওয়াই জাতীয় বাজেটকে অত্যন্ত ইতিবাচক ও ভারসাম্যপূর্ণ বলে অভিহিত করে বলেন, জাতীয় বাজেটের আকার ভালো অর্থনীতির ইঙ্গিত দেয় এবং এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশে আরও বিনিয়োগের বিষয়ে চিন্তা করার জন্য একটি ভাল ইঙ্গিত দেখায়।
হিকারি কাওয়াই দাবি করেন, সরকার আরও বেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আইপিপি'র মতো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ওপর আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে। জাপান ভবিষ্যতে অবকাঠামো উন্নয়নের মেগা প্রকল্পে আরও বিনিয়োগ করবে।
আরইউ/এসজি/