বাজেট সময়োপযোগী: আইসিএবি
সরকার ঘোষিত বাজেটকে সময়োপযোগী উল্লেখ করেছে ইনিস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)।
বাজেট পরবর্তি ‘প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের উপর চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদের ভাবনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট শাহাদাত হোসেন। আইসিএবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটি শনিবার (১১ জুন) কাওরানবাজার সিএ অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে আইসিএবি সভাপতি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার একটি সময়োপযোগী ও ব্যাপক আকারের বাজেট সংসদে পেশ করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও, এই যুগোপযোগী বাজেট প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনকের শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাস্তবায়ন সম্ভব বলে আমরা মনে করি।”
অতিমারী পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকার ২৪৬,০৬৬ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে যা আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত উৎসাহজনক পদক্ষেপ। অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্ধকৃত বাজেট, সরকারের নেওয়া একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
করের জিডিপি অনুপাতের উন্নতির জন্য করের নেট সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কর নেট সম্প্রসারণে সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে নমি যাচাইকরণ ব্যবস্থা ব্যস্তবায়নে এনবিআর এবং আইসিএবির ডিডিএস এর ন্যায় যৌথ উদ্যোগ লক্ষ্যকৃত রাজস্ব অর্জনে সহায়তা করবে। আমরা বিশ্বাস করি যে এই উদ্যোগটি আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনবে। কর সংস্কার কর জিডিপি অনুপাতের উন্নতি এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধিতেও অবদান রাখতে পারে।
শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর ন্যায় এই বছরেও আইসিএবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২২-২০২৩ বাজেট সংক্রান্ত রাজস্ব আইনের যেমন আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ ও আয়কর বিধি ১৯৮৪, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬-সহ অন্যান্য আইন ও বিধির উপর প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আমাদের প্রস্তাবণাসমূহের অনেকাংশেই গৃহীত হয়েছে, তার জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
নির্দিষ্ট ধরনের কোম্পানির জন্য করের হার শর্তসাপেক্ষে কমানো, উৎসে কর্তনকৃত ট্যাক্স এর ক্ষেত্র এবং হারের প্রস্তাবিত পরিবর্তন একটি ভাল উদ্যোগ। পণ্য ও সেবা রপ্তানিকারী অন্যান্য সাধারণ শিল্পের জন্য ১২ শতাংশ এবং গ্রীণ শিল্পের জন্য ১০ শতাংশ করের হার প্রবর্তন, পণ্য ও পরিষেবার রপ্তানির বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করবে। তাছাড়া, একত্রীকরণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা, প্রাক, প্রবর্তন বাঘের পরিমার্জন এবং স্টার্ট-আপ ব্যবসার জন্য পৃথক বিধান, যা নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়িক ও সৃজনশীল উদ্যোগে অনুপ্রেরণামূলক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।
ব্যবসায়ীক পরিষেবার উপর ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট, মূসক রেয়াত গ্রহনের সময়সীমা ২ করমেয়াদ হতে ৪ করমেয়াদ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব, জরিমানা ১০০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ কমানো, বন্ডেড অয়ারহাউসে অপারেশন ইলেকট্রনিকভাবে সম্পাদন করা-এ বিষয়গুলো যুগোপযোগী এবং ব্যবসা বান্ধব।
বাজেটে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টদের ভূমিকা নিয়ে বলেন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টগণ সরকারের রাজস্ব আহরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চার্টার্ড একাউন্টেন্টগণ কর পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে, কর পরামর্শক হিসেবে, কর আইনের সঠিক প্রতিপালন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে করদাতা ও সরকারকে সহায়তা করে থাকে। সর্বোপরি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে চার্টার্ড একাউন্টেন্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশে এফডিআই আনা এবং উদ্যোক্তাদেরকে নতুন নতুন ব্যাবসায়ে উৎসাহিত ও পরামর্শ প্রদান করা, ব্যবসা করার সহজতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে বিশেষ মতামত প্রদানের মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন, আইসিএবির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কাউন্সিল মেম্বার ট্যাক্সেশন অ্যান্ড করপোরেট ল'স কমিটি হুমায়ুন কবির, সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, মেম্বর কাউন্সিল সাব্বির আহমেদ, মো. আব্দুল কাদের জোয়াদ্দার, এমবিএম লুতফুল হাদী, সিনহাশিস বড়ুয়া, আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বসু ও মাহবুব আহমেদ সিদ্দীক প্রমুখ।
এসএম/