বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করছে সরকার
অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সরকার সঞ্চয়পত্রে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবুও সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। মূলত বিশাল অংকের ঘাটতি বাজেটের অর্থ সংস্থানে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী।
এবারের বাজেটের শ্লোগান ‘কোভিডের বিপর্যয় জয় করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা’। এটি আওয়ামী লীগের ২২তম, স্বাধীন দেশের ৫১তম ও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের ৪র্থ বাজেট।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে সক্ষমতার উন্নয়ন, বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সঙ্গে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। জিডিপি অংশ হিসাবে যা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণকে ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার।
আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্য ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। কর ছাড়া প্রাপ্তি থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা আদায় লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে আদায়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর এ ঘাটতি পূরণের জন্য কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেওয়া হবে সেটার একটি ছক তৈরি করেছে সরকার। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ও ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। চলতি অর্থবছরে যা আছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে। এই খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য। সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে গত ৩০ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। তবে এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। এ ছাড়া আগের নেওয়া ঋণের ২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। গত ৩০ মে পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। যেখানে পুরো অর্থবছরে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা সরকারের।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৭২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় এবার সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সরকার নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়েছে। ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এসব শর্তের কারণে অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়েছেন।
পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।
এসজি/