আবার কমলো টাকার মান, ডলার এবার ৮৯.৯০ টাকা
ডলারের সংকট দুর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৯ টাকা রেট বেধে দিয়েছিলো রবিবার। তারপরও কমছে না সংকট। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার তা তুলে নিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৮৯ দশমিক ৯০ টাকা দরে সাড়ে কোটি (১৩৫ মিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে। এটাই আন্ত:ব্যাংক রেট বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। এখন থেকে এই দরে ব্যাংকগুলো ডলার কিনতে পারবে। এরফলে অষ্টমবারের মতো টাকার মান কমে ৮৯. ৯০ টাকা হলো।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্বকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরফলে প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে, রপ্তানি আয়ও কমে যাচ্ছে। ফলে ডলারের সংকট বাড়ছে। তা থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০০ মিলিয়নের বেশি ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে।
ব্যাংকারদের সঙ্গেবৈঠক করে গত রোববার ব্যাংকে ডলারের একক রেট ৮৯ টাকা বেধে দেয়। তাতেও ইতিবাচক ফল প্রভাব পড়ছে না বাজারে। রপ্তানিকারকরা বিল নবায়ন করতে চাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার (২ জুন) ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে, বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে তারা নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে।
বিষয়য়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচারক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বাজারে সার্পোট দেওয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৮৯ দশমিক ৯০ টাকা দরে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। কাজেই এটাই বাজার দর ধরে নিতে হবে এবং ব্যাংকগুলো এই দরে কিনতে পারবে।একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ও চাহিদা বিবেচনায় ডলারের দাম ঠিক করবে। বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলো বলেছে, প্রবাসীদের দাবি ডলারের এ রেট ঠিক নয় বলে মনে করছে। এ জন্য প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের উপর নির্ভর করে ব্যাংকগুলো ডলার দর নির্ধারণ করবে। তবে হঠাৎ যেন ডলারের দাম বেশি বাড়িয়ে না হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো যাতে দাম বেশি বাড়াতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। আমদানিতেও একইভাবে ডলারের দাম নির্ধারণ হবে। পাশাপাশি রপ্তানি আয় নগদায়ন হবে বাজারমূল্যে।’
উল্লেখ্য, ডলারের দাম বাড়তে থাকায় গত রোববার আন্ত:ব্যাংক লেনদেন ডলার রেট ছিল ৮৯ টাকা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যা সোমবার (৩০ মে ) থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দেয়। আর আমদানি পর্যায়ে ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। আর প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৮৯ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু এ দাম নির্ধারণের পর কমে যায় প্রবাসী আয়। রপ্তানিকারকেরাও বেঁধে দেওয়া দামে রপ্তানি বিল নগদায়ন করছেন না। এতে আমদানি বিল মেটাতে গিয়ে সংকটে পড়ে কয়েকটি ব্যাংক।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। এ সময় বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। তাতেই ডলারের দামের সীমা তুলে দেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ একক রেট বেঁধে দেয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কোনো ব্যাংক ৯৮ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে। কেউ কেউ ৯৩ টাকা, কেউ বা ৯৫ টাকা নিয়েছে ডলারের দাম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি করার মাধ্যমে ডলারের দাম ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণের ফলে টাকার মান অষ্টমবারের মতো কমল। ডলারের দাম কমতে বাংলাদেশ ব্যাংক সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের রোববার পর্যন্ত ১১ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে মে পর্যন্ত) ৬০০ কোটির (৬ বিলিয়ন) বেশি ডলার বিক্রি করেছে এরপরও বাজারের অস্থিরতা অস্থিরতা কমছে না।
জেডএ/এএজেড