চামড়া খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে
দেশের চামড়া খাতের প্রধান সমস্যা কমপ্লায়েন্সের অভাব। যে কারণে এ খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য কম দাম পাচ্ছে। আবার স্থানীয় বাজারেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব। সেজন্য এ খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে চামড়া খাত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৩১ মে) এশিয়া ফাউন্ডেশন, অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) যৌথ উদ্যোগে এক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন মতামত দিয়েছেন। ট্যানারি শিল্পে করোনার প্রভাব বিষয়ে র্যাপিড একটি গবেষণা করেছে। ‘ট্যানারি শিল্পে করোনার প্রভাব মূল্যায়ন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথি শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতান বলেন, ‘চামড়া খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ঠিকমত পরিচর্চা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে পারলে এ খাত থেকে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন রপ্তানি আয় সম্ভব। কিন্তু এ খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ইউরোপীয়ান, ইটালিয়ান ও ভারতীয় কোম্পানি আসছে। কিন্তু কারোর কাছ থেকে সমাধানের ভালো প্রকল্প পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়ার নায্যমূল্য নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জ। কোরবানির সময় চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সে দাম পান না।
সাভারের সিইটিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগের ইটিপি আর এখনকার ইটিপি আলাদা। ইটিপির ১০৯টি নজেলের কেমিক্যাল নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি মডিউল পরিস্কার করা সম্ভব হয়নি। আগের তুলনায় ইটিপির কমপ্লায়েন্স অনেক ভালো। আগামীতে আরও ভালো হবে। রাজশাহীতে চামড়া খাতের জন্য সিইটিপি প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। হাজারীবাগকে রেড জোন থেকে বের করার বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে শিল্প সচিব বলেন, হাজারীবাগে বাই প্রডাক্ট করার সুযোগ রয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হবে, রপ্তানি আয় হবে। এজন্য নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এরকম সময়ে চামড়া পণ্যের বাজারে নিজেদের অংশ বাড়ানোর সুযোগ ছিলো। কিন্তু নিজস্ব কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও কমপ্লায়েন্সের অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কাঁচা চামড়ার রপ্তানি কমেছে ৭৯ শতাংশ। আর ফিনিশড চামড়ার রপ্তানি বেড়েছে ৮০ ভাগ। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ নিজেদের চামড়া ব্যবহার করতে পারছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ গবেষণার ফলাফল মূল প্রবন্ধ আকারে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। কিন্তু এখন শুধু প্রবৃদ্ধি বা মাথাপিছু আয় নয়, এর পেছনের পরিস্থিতিগুলোর উন্নতি দরকার। করোনার সময়ে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেটি কাজে লেগেছে। তিনি বলেন, চামড়া খাতে ভালো না করার একমাত্র কারণ হচ্ছে কমপ্লায়েন্সের অভাব। পরিবেশগত, সামাজিক ও মানের দিকে জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, চামড়া খাতে ৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ আছে। এই ঋণের বিপরীতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। অনেক কারখানাই সময়মত ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। ওইসব কারখানা প্রণোদনা সুবিধাও পায়নি। একটা ম্যাপিং করে এগোনো গেলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব। চামড়া খাতের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে লেদার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, চামড়া খাতের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য এ খাতকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা উচিত। সামস্টিককভাবে কর্মী ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এটা দূর করার উদ্যোগ দরকার। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। আর সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী।
জেডএ/এএজেড