সাতবার টাকার মান কমিয়ে ডলার ৮৯ টাকা
ডলারের সংকট কাটাতে অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা সোমবার (৩০ মে) থেকে কার্যকর হবে। ব্যাংকগুলোর কাছে এ দামে ডলার বিক্রি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে চলতি বছরে ডলারের দাম বাড়ল সাতবার অর্থাৎ টাকার মান অবমূল্যায়ন করা হলো। এর ফলে এক ধাক্কাতেই ১ টাকা ১০ পয়সা কমিয়ে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ৮৯ টাকা করা হলো।
উল্লেখ্য, ডলারের দাম বাড়াতে ব্যাংকগুলোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিলো। যা বর্তমানে আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা।
এর আগে ডলারের সংকট কাটাতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতাদের সঙ্গে এক সভা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সভায় প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য কত হবে, তা নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রস্তাব দিতে বলা হয়।
সেই অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো রবিবার প্রস্তাব দেয়- রপ্তানি বিল নগদায়নে ডলারের দাম হবে ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সা। আর প্রবাসী আয় আনতে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ধরা হবে ৮৯ টাকা ৭৫ পয়সা। আর আন্তব্যাংকে ডলার কেনাবেচা হবে ৮৯ টাকা ৮০ পয়সায় ও আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হবে ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সায়। ব্যাংকগুলোর এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর রবিবার (২৯ মে) আন্তব্যাংক কেনাবেচার ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেন ৮৯ টাকা। পাশাপাশি আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রবিবার সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে ডলার দাম বাড়ানো হয়েছে। তাতেও কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় রবিবার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে এ নির্দেশনা মেনে ব্যাংকগুলোকে ডলার কেনাবেচা করতে হবে।’ কিছু দিন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেওয়া নিয়মে বাস্তবে ব্যাংকে পাওয়া যাচ্ছে না ডলার। অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ডলারের দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো কারসাজি আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শনে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। এতে প্রায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের দাম কমতে বাংলাদেশ ব্যাংক সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের রবিবার পর্যন্ত ১১ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৬ মে পর্যন্ত) ৫৭০ কোটি (৫.৭০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে এরপরও বাজারের অস্থিরতা অস্থিরতা কমছে না। একেক ব্যাংক একেক দরে ডলার বিক্রি করছে।
গত জানুয়ারির শুরুতে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ মার্চ তা আবার ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় আরও ২৫ পয়সা। তখন ১ ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ৯ মে বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে এ বিনিময় হার ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। তারপর গত ২৩ মে ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৪০ পয়সা বাড়িয়ে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে নির্ধারণ করা হয় ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা, যা রোববার পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন সপ্তাহেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর চলতি বছর ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমল সাত বার।
জেডএ/এএজেড