রবিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মিটিং
কারসাজিতে ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম
বোরো ধানের মৌসুম শেষের দিকে। তারপরও প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। ক্রেতারা বলছেন, এভাবে প্রতিদিন চালের দাম বাড়লে আমরা খাব কি? বিক্রেতারা বলছেন, মিলমালিক ও বড় বড় কোম্পানির কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। তারা মজুত করে রাখছে। বাজারে চাল ছাড়ছে না। টাকা দিলেও ধানের দাম বেশি বলে চাল দিচ্ছে না। শনিবার (২৮ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। এভাবে চালের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ায় রবিবার খাদ্যমন্ত্রণালয়ে জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রাইসমিল মালিকদের উপস্থিত হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আমনের পর এবার বোরো মৌসুমেও ধান উঠা প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে। বোরা ধানে উঠার আগে কম চালের দাম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ধান উঠলেও কমছে না চালের দাম। এতে খোদ পাইকারিও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিরক্ত। তারা বলছেন, আগে বলা হয়েছিল ধান নেই, নতুন ধান উঠলে কমবে চালের দাম। কিন্তু বোরো ধান উঠা প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে। তারপরও নেই কোনো সুখবর। বরং বাড়ছে দাম।
কারওয়ান বাজার, মোহাম্মসদপুরের কৃষিমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রায় দোকানো ঠাসা ঠাসা বস্তায় চাল। চালে ভরে আছে দোকান। কিন্তু তা বাড়তি বা আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এর কারণ কী জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক মো. আব্দুল আওয়াল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘প্রতি দিন বাড়ছে চালের দাম। তিন দিনের ব্যবধানে বস্তায় বেড়েছে ৩০০ টাকা। কারণ তিন দিন আগে মিনিকেটের বস্তা ছিলো ২৩০০ টাকা, তা বেড়ে হয়েছে ২৬০০ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। মিনিকেট চালের দামও বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা। কারণ ২১০০ টাকার বস্তা হয়েছে ২৩০০ টাকা। একইভাবে গরীবের চাল নামে পরিচিত মোটা গুটি স্বর্ণার দামও বাড়ছে। তা কোনোক্রমেই কমছে না। তা ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ীরা আবার দাম বেশি হওয়ায় নেই বলে জানান। অনেকে বলছেন বেশি দামে কিনে অপবাদ নিয়ে বেশি দামে বিক্রি না করাই ভালো।
দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলো তিনি আরও বলেন মিলমালিকদের ও বড় বড় কোম্পানির সিন্ডিকেটে আটকে যাচ্ছে চাল। তাইতো তারা সহজে পাইকারি ব্যবসায়ীদের চাল দিচ্ছে না। টাকা দিয়েও চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য বাজারে চালও কমে যাচ্ছে।’ শুধু ওই ব্যবসায়ী নয়, হাজী রাইস এজেন্সি, কুমিল্লা রাইস এজেন্সিসহ প্রায় সকল চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া কমবে না চালের দাম। কারণ মিলমালিকরা সহজে চাল দিচ্ছে না।
এদিকে কৃষিমার্কেটের প্রত্যাশা রাইস এজেন্সির মো, মাঈন উদ্দিনও ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রতি দিনই বাড়ছে চালের দাম। এটা কোথায় ঠেকবে বলা মুসকিল। আমরা প্রতিদিন বাড়তি দামে চাল কিনছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, মিলমালিকরা বলছে, বাড়তি চালের দাম। তাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি কম হচ্ছে। কারণ ভোক্তারা হিমসিম খাচ্ছে বাড়তি দারের কারণে। সরকার ইচ্ছা করলে এটা বন্ধ করতে পারে। চালের মিলে অভিযান চালাতে হবে। একই সঙ্গে আমদানি করতে হবে। তবেই কমতে পারে চালের দাম।
এদিকে সব চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা বলছেন, এভাবে চালসহ সব জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে আমরা খাব কি? জেসমিন নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ক্রেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘চালসহ আটা, ডিম, চিনি, তেলের দাম বেড়ে গেছে। এভাবে প্রায় জিনিসের দাম বেড়েই যাচ্ছে। একবার বাড়লে আর কমে না। সরকারের উচিৎ যেভাবে হোক চালসহ সব জিনিসের দাম কমাতে হবে। চালেরমিলে মনিটরিং করতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। এ সময় মো. হানিফ নামেও আর একজন বিক্রেতা বলেন, বেড়েই যাচ্ছে সব জিনিসের দাম। একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম। আমরা তাহলে খাব কি? যাব কোথায়? তিনি আরও বলেন, যেভাবে ব্যয় বাড়ছে তাতে আয়তো আর বাড়ে না। বাধ্য হয়ে খাবারের মধ্যে সমন্বয় করতে হচ্ছে। ব্যাখা করে তিনি বলেন, ধরুন আগে সপ্তাহে দুই ডজন ডিম খেতাম। বর্তমানে এক জডন খাচ্ছি। চালও কম খেয়ে সবজির দিকে নজর দিতে হচ্ছে।’
রাজধানীতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় নওগা, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় খোজ নিয়ে জানা গেছে প্রতি মন ধান ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। জানতে চাইলে নওগার নিয়মতপুরের কমিপুর গ্রামের বাবু বলেন, ‘আগে কম দাম ছিলো। বর্তমানে বেড়ে সর্বোচ্চ ১১৬০ টাকা মন ধান বিক্রি করা হয়েছে। সাধারণত প্রতি মন ধানে ২৫ কেজি চাল হয়। এতে প্রতি কেজির দাম ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা হয়। সেই চাল ঢাকায় মিনিকেট নামে ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা, আর আটাশ নামে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
ভরা মেীসুমেও চালের বাজার লাগামহীন কেন তা জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ অটো রাইসমিল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কেন বাড়ছে চালের দাম তা জানাতে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রবিবার মিটিং আছে সেখানে জানানো হবে। বাজারে খোজ নিলেই জানা যাবে এর কারণ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ধানের দাম বাড়ছে তাই চালের দামও বাড়ছে। এটাই সোজা কথা। ধানের দাম বাড়িয়ে কম দামে চাল মিলবে না।’
এএজেড