চোর-বাটপারের নেতা হতে চাই না: জসিম উদ্দিন
ভোজ্যতেলের মিলমালিকরা বলছেন, তেলের অভাব নেই। তবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ নেই সয়াবিন তেলের। কোথাও সামান্য পাওয়া গেলেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আবার অভিযান চালালেই উদ্ধার হচ্ছে হাজার হাজার লিটার তেল। এমন অভিযানে আপত্তি জানান পাইকারি ও খুচরা তেল ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এসব অভিযানে হয়রানির শিকার হচ্ছে। তেল স্টক না করলে ব্যবসা হবে কীভাবে। আইন করে জানাতে হবে স্টক করা যাবে না।
অন্যদিকে, এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সাফ জানান, মুখে তেল নাই বললেও অভিযানে স্টক পাওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ‘চোর-বাটপারের নেতা হতে চাই না’।
বুধবার (১১ মে) ভোজ্যতেলের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমনই বিতর্কে জড়ান তারা। কেউ দায় নিতে চায় না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর উদ্যোগে ভোজ্যতেলের ব্যাপারে রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজারের তেল ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, ‘দীর্ঘ দিন থেকে তেল নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কাদা ছোড়াছুড়ি করা হচ্ছে। মিলমালিক ছাড়া তেলের দাম বাড়ানো সম্ভব না। তারা নিজের লোক দিয়ে তেল বাজারে বিক্রি করছে। আমরা তেল পাচ্ছি না। তা হলে কারা মাল উধাও করল। ৯০ দিন মজুদ করা যাবে মাল। অথচ ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করছে। এটা হতে পারে না। আইন করে জানাতে হবে কতদিন রাখা যাবে। কারণ দোকানে মাল না থাকলে বিক্রি করব কী? বেশি মাল থাকলে দাম বাড়বে না। রাজশাহী পুঠিয়ায় তেল উদ্ধার করা হলো। এতে তার সুনাম নষ্ট হয়েছে। মিলমালিকরা প্রতিশ্রুতি দেন তেলের সরবরাহ ঠিক থাকবে। কিন্তু তা হয়নি বলে তেলের সংকট হয়েছে।’
মৌলভীবাজারের পাইকারি তেল ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা তেল পাই না। ব্যবসা করতে পারি না। তাহলে এত তেল গেল কোথায়? মিলমালিকরা ঠিকমতো তেল দেয়নি।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের সংগঠন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাজ করে। ডিলারদের কাছ থেকে তেল এনে সাত থেকে ১৫ দিন রেখে বিক্রি করে ভোক্তাদের কাছে। এখানে সরকার হাত দিলে মুক্তাবাজার অর্থনীতি গ্রহণযোগ্য নয়। বাজার বাজারের মতো ছেড়ে দিতে হবে।’
এস আলম গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার কাজী সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রমজানের আগে দাম বাড়াব বলঅ হলেও তা বাড়ানো হয়নি বাণিজ্যমন্ত্রীর কারণে। প্রতি দিন চার থেকে পাঁচ হাজার টন তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। তারপরও বাজার থেকে তেল উধাও। কেউ ধরতে পারল না।’
এদিকে সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাব চক্রবর্তী বলেন, ‘২০ মার্চ থেকে ৭ মে পর্যন্ত ১৬০ টাকা লিটারে আট কোটি ৫১ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করা হয়েছে। তাহলে তেল দেয়নি কেন বলা হচ্ছে।’
এফবিসিসিআইএর সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, মিলমালিকরা পাইকারি, পাইকারিরা খুচরা ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করছে তেল নিয়ে। আবার ‘ব্যবসায়ীরা বিশ্বাস রাখেননি বলে বাণিজ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এতে ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে ভোক্তাদের কাছে। আবার ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলেই তেল উদ্ধার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকারি রেটের চেয়ে বেশিতে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। তারা কারসাজি করেছে।
এফবিসিসিআইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, মিলমালিকরা এর আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তেলের সরবরাহে সমস্যা নেই হবে না। দামও বাড়বে না। তাহলে এত সংকট কেন? দামও বাড়ল কেন। আমার ড্রাইভারও রামপুরায় তেল পায় না। অথচ অভিযানে তেল পাওয়া যাচ্ছে। মিসট্রাস্ট হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ‘৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ীকে এক শতাংশ ব্যবসায়ী ছোট করবে, তা হতে পারে না। গালি খাবে সবাই, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতা হিসেবে এটা মানতে পারি না। চোর-বাটপারের নেতা হতে চাই না। স্টক (মজুদ) করা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমদানিকৃত মাল বেশি করে স্টক করা যাবে না। ফরমাল রিটেইলে তেল আসলে তেল লুকানোর পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’
জেডএ/এমএমএ/