বৃহস্পতিবারের বাজারদর
কোথায় গেল সয়াবিন তেল: প্রশ্ন ব্যবসায়ীদের
রমজান মাসের আগে থেকেই সয়াবিন তেল নিয়ে বাজারে চলে নৈরাজ্য। সরকার বাধ্য হয়ে ট্যাক্স ও ভ্যাট কমিয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার মিলমালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করে মিলে পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছে। তারা পর্যাপ্ত তেল দিচ্ছে বললেও বর্তমানে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ১ লিটার, ২ লিটার তেল হাওয়া হয়ে গেছে। দবে ১০৬০ টাকা দিলে ৫ লিটার তেল মিলছে। তাদের প্রশ্ন কোথায় এতো তেল। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, আমরাও পাচ্ছি না তেল। মিল থেকে কেউ দিচ্ছে না।
এদিকে রমজানের প্রথমে বাজারে হঠাৎ করে বেগুন, মরিচ, শসার কেজি ও লেবুর ডজন সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গেলেও বর্তমানে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। আলু, পেঁয়াজ, চাল, ডাল, আদা, রসুন, ভোজ্যতেল, চিনি, মাছ, মাংস ও ডিম আগের সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, রমজান মাস শেষে ঈদ ঘনিয়ে আসছে। চাহিদা কমতে শুরু করেছে। এ জন্য একটু স্বস্তি ফিরে এসেছে বাজারে। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে বিভিন্ন পণ্যের দামের এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
হাওয়া ভোজ্যতেল
সরকারের ভ্যাট কমানো ও বাজার মনিটরিংয়ের প্রভাবে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমলেও কয়েক দিন থেকে বাজারে একেবারে পাওয়া যাচ্ছে না। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কোনো তেল নেই। কয়েক দিন থেকে পাইকারি বাজারে পাওয়া যায় না। তাই দোকানে কোনো তেল নেই। এ জন্য আমারাও বিক্রি করতে পারছি না।’ শুধু ওই ইউসুফই নয়, হাজী মিজান এন্টারপ্রাইজের মালিক মিজানও বলেন, ‘আগের প্যাকেটজাত এক লিটার তেল ১৫৮ টাকা, ২ লিটার ৩১৫ টাকা, ৫ লিটার ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকা বিক্রি করা হলেও কয়েক দিন থেকে কোনো তেল নেই।’ তবে মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক জসিম বলেন, ‘এক লিটার, দুই লিটারের কোনো তেল নেই। তবে ৫ লিটার নিলে ১০৬০ টাকা লাগবে। এতে সরিষার তেল এক লিটার আছে। এটা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কি করব? পাইকারি বাজারে মিলুসহ অন্যরা এভাবে আমাদের দিচ্ছে। আমরাও তা নিয়ে বিক্রি করছি। শুধু তাই নয়, সরিষার দরকার না হলেও ৪০ পিস সয়াবিন তেলে ৪৮ পিস সরিষার তেল নিতে হয়েছে।’
তবে ছোলার কেজি কমে বর্তমানে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা। চিনির কেজি ৭৮ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এসব জিনিসের দাম আগের চেয়ে কমতে শুরু করেছে।
আগের দামেই পেঁয়াজ
দেশে প্রচুর পেঁয়াজের উৎপাদন হওয়ায় রমজান মাসে ব্যাপক চাহিদার পরও আগের সপ্তাহের মতো ২৬ থেকে ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। মেসার্স মাতৃভান্ডারের কালাম শেখ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আদার দামও কমে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, রসুন ৬০ থেকে ১২০ কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এছাড়া আগের মতোই আড়তে ১৩ থেকে ১৬ টাকা কেজি আলু। খুচরায় ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, টমেটোর দাম কমে ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে বেগুনের দাম কমে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শসার কেজি ১৫ থেকে ৩০ টাকা, গাঁজর ৩০ টাকা, শাকের আঁটি ৮ থেকে ১০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস বিক্রি করা হচ্ছে। একইভাবে মরিচের দামও কমে বর্তমানে কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেড়স ৪০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০, সজনে ডাঁটা ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
আগের দামে চাল
সারাদেশে বোরো ধান এখনো উঠেনি ক্ষেত থেকে। তাই কমেনি চালের দাম। তবে কয়েক দিনের নতুন ধান উঠলে কমবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। বর্তমানে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। কারওয়ান বাজারের কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মো. আবুল কাসেম ও হাজী ইসমাইল এন্টারপ্রাইজের মো. জসিম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘আগের সপ্তাহের মতো মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা কেজি, বিআর-২৮ চাল ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, পারিজা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’
স্থিতিশীল মাছের দাম
এদিকে রমজানের প্রথম দিকের মতো শেষ সময়েও আগের সপ্তাহের মতো বর্তমানে মাছের বাজার স্থিতিশীল বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী তালেব বলেন, ‘আকারভেদে রুই ও কাতলা ২০০ থেকে ৪৩০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকারভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চাষের শিং মাছ কেজি ৩০০ টাকা, দেশি শিং ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের কই ৩০০ টাকা ও দেশি ৫০০ টাকা, দেশি শৈল মাছ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, ট্যাংরা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, কাচকি ৫০০, বাতাসি ৪৫০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বৈশাখের ঝাঁজ কমলেও আগের মতো ছোট ইলিশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বড়টা ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
স্থিতিশীল গরু-খাসি মাংস
আগের সপ্তাহের মতোই গরুর মাংস ৬৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। জনপ্রিয় মাংস বিতানের নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আগের সপ্তাহের মতো ব্রয়লার ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কর্ক ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আর আগের সপ্তাহের মতোই ডিমের ডজন ৯৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বর্তমানে ঈদ ঘনিয়ে অসায় অনেকেই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাই চাহিদা কমতে শুরু করেছে। এজন্য দামও কিছুটা কমছে।
জেডএ/