যুদ্ধে খাদ্য সংকট থেকে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা বিশ্ব ব্যাংকের
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে সৃষ্টি হওয়া খাদ্য সংকট বিশ্বকে একটি ‘মানবিক বিপর্যয়ে’র মুখে ঠেলে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। তিনি বলেন, যুদ্ধ এভাবে চলতে থাকলে খাদ্যপণ্যের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি লাখ লাখ মানুষকে অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
এটা একটি মানবিক বিপর্যয়। আবার একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে এটি একটি রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হচ্ছে। আর তারা এই সংকটি মোকাবিলায় কিছুই করতে পারছে না। এর জন্য তারা দায়ী না হয়েও তারা দেখছে যে, দাম বেড়েই চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের বৈঠকের কর্মসূচির মধ্যেই বিবিসিকে এই সাক্ষাৎকার দেন ডেভিড ম্যালপাস।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, খাদ্যপণ্যের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন হতে পারে (৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি)। এটি গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক বেশি মনে করেন ম্যালপাস।
তিনি বলেন, বিপর্যয়ে তারা নিজেরা কম খেতে এবং সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে খরচ কমানোর জন্য। এর মানে দাঁড়াচ্ছে— এটি সত্যিকারের একটি অন্যায্য সংকট। এটি দরিদ্রদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। করোনা মহামারিতেও একই ধরনের বাস্তবতাই দেখা গেছে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বিবিসিকে বলেন, পণ্যের দাম বৃদ্ধির পরিসর বিস্তৃত এবং গভীর। ভোজ্য তেল, দানাদার শষ্য, অন্যান্য খাদ্যশষ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ভুট্টার মত খাদ্য পণ্যের দামেও প্রভাব পড়ছে, কারণ গমের দাম বাড়লে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়।
খাদ্য উৎপাদনে ভর্তুকি দেওয়া বা দাম বেঁধে দেওয়ার পদক্ষেপকে নিরুৎসাহিত করছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। বরং তার পরামর্শ, বিশ্বজুড়ে সার ও খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে। আর হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
‘একটি সংকটের মধ্যে থেকে আরেকটি সংকটের জন্ম’ নেওয়ার যে ঝুঁকি, সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন ডেভিড ম্যালপাস।
মহামারির সময়ে উন্নয়নশীল অনেক দেশের ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে, অনেক কিস্তি জমে গেছে। এখন খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদেশি মুদ্রার সংকটে পড়ে কিস্তি পরিশোধে সমস্যায় পড়ছে অনেক দেশ। এরকম সংকটে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়ার দশা হয়েছে।
ম্যালপাস বলেন, এই আশঙ্কা খুবই বাস্তব। কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটতে শুরু করেছে, আমরা জানি না এটা কতদূর গড়াতে পারে। দরিদ্র দেশগুলোর ৬০ শতাংশই হয় ঋণের নিচে চাপা পড়ছে, অথবা চাপা পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছ।
আরএ/