আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়তি চালের দাম

আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে। গত বছরের চেয়েও বেড়েছে উৎপাদন। এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এরমধ্যে চাল ১২ দশমিক ৩২ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৭৬ লাখ টন। ফলে দেশে ধান-চালের কোন সংকট নেই।
তবু বাজারে কমছে না দাম। ব্যবসায়ীরা বলছে, দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বোরো না উঠা পর্যন্ত বাড়তে থাকবে।
কি কারণে বাড়ছে দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার ধান কিনতে থাকলে চালের দাম এর চেয়ে কমবে না।
তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। কেউ কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর দেশে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ টন। আর গত বছরে আমনের উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ টান ধান।
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দামের হেরফের। বাজারভেদে দামের পার্থক্য ৫ থেকে ৭ টাকা।
রাজধানীর মোহাম্মসদপুরের কৃষিমার্কেট পাইকারি বাজারে গুটিশর্না বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে তা ৪৫-৪৭ টাকা। পাইকারি দোকান শাপলা রাইস এজেন্সির শিপলু জানান, রশিদসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি। জিরাসাইল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আটাশ ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা আর পাইজাম ৪২ থেকে ৪৩ টাকা।
এদিকে স্থানীয় খুচরা চালে দোকানে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মিনিকেট সাগর ৬২, রশিদ মিনিকেট ৬৫, আটাশ চাল ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুধু কৃষিমার্কেটই নয়, কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য মার্কেটেরও একই চিত্র। ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি করে চালের মজুত করে রেখেছেন। তারা বলছেন, মোটা চালের গ্রাহক খুব কম। তাই দাম একটু কম। কিন্তু চিকন চালের চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি। তাই কমবে না দাম। বরং বোরো না উঠা পর্যন্ত বাড়তে থাকবে।
এদিকে বুধবার সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর নিত্যপ্রণ্যের বাজারদরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চিকন চালের দাম ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা কেজি, মাঝারি ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা এবং মোটা চাল স্বর্ণা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ধানের উৎপাদনের সঠিক তথ্য নেই। তাই বাম্পার ফলনের কথা বলা হলেও চাহিদার সাথে সরবরাহের ফারাক থাকায় দাম কমছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষি অর্থনীতিবিদ এ প্রতিবেদককে জানান, সকালে কমবে, বিকেলে বাড়বে পণ্যের দাম। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্ত চাহিদার সাথে সরবরাহের ঘাটতি না থাকলে এটা তেমন কমবেশি হবে না। এবার আমনের কোনো ক্ষতি হয়নি। বাম্পার ফলনের কথা বলা হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে। তারপরও কমছে না চালের দাম। আবার মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত না থাকলেও বেশি দামে তা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
উল্লে্খ্য, গত বোরো ধানের মৌসুম থেকেই চালের দর বাড়তি। বাধ্য হয়ে সরকার গত আগস্টে চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। পাশাপাশি পণ্যটি আমদানিতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তারপরও বাজারে চালের দাম কমেনি।
তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। কেউ কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এরমধ্যে চাল ১২ দশমিক ৩২ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৭৬ লাখ টন। ফলে দেশে ধান-চালের কোন সংকট নেই।
খাদ্য আমদানি ও সংগ্রহের কারণে সরকারের কোষাগারে বাড়ছে মজুদ। ১৪ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মোট মজুদ দাড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার মেঃ টন। এর মধ্যে চাল ১৩ লাখ ৫১ হাজার টন , গম প্রায় তিন লাখ টন এবং ধান দশমিক ০৬ লাখ টন।
খাদ্যের মজুত বাড়াতে সরকার চলতি মৌসুমে আট লাখ টন আমন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। এর মধ্যে তিন লাখ টন আমন ধান ও পাঁচ লাখ টন সিদ্ধ চাল কেনা হবে। সংগ্রহ অভিযান আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং গমের মূল্য প্রতি কেজি ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে আমন মৌসুমে চালের পাশাপাশি ধানও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে মাঠ পর্যায়ে ধানের দাম ভালো পাচ্ছে কৃষক।
চালের দাম প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমানে সরকারের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তায় এই মজুদ বৃদ্ধি করতে সরকার সচেষ্ট। তিনি বলেন, কেউ যেন অবৈধ মজুদ করে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেএ/টিএ/জেডএকে
