দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজেটে দিকনির্দেশনা জরুরি
করোনা অতিমারিতে ক্ষতির সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশও সেই অনিশ্চয়তার ফল ভোগ করছে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় পিছিয়ে পড়া মানুষ নতুন করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই আসন্ন বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে এই দাবি করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এ সংলাপে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা অংশ নেন।
সংলাপের আলোচকরা বলেন, আসন্ন বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি। এছাড়াও, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান খাতে অতিমারির ফলে কী কী ক্ষতি হয়েছে এবং সেটা পুষিয়ে নিতে ব্যাপক আকারে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে আলোচকরা মনে করেন। সেই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আরও সুষ্ঠুভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর সম্মানীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাজেটে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা উচিত। তাই বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পূর্বেই জনসাধারণের জন্যে একটি খসড়া নীতিমালা উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। যেন জনগণ সরাসরি তাদের প্রত্যাশাগুলো ব্যক্ত করতে পারেন। অর্থনীতির চাকা সচল করতে তাই একটি সম্প্রসারণমূলক মুদ্রা নীতি প্রণয়ন অতীব জরুরি। তাছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে, সরাসরি বিভিন্ন প্রণোদনা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা, খাদ্য প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পরিচালক টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, অতিমারির জন্য শিশুদের পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক বিদ্যালয়গুলো চালু থাকলেও, গ্রামাঞ্চলে বা দুর্গম জায়গাগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একই কারণে বিগত দুই বছরে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ দু’টোই বেড়েছে। তাই এই সমস্যাগুলোর নিরসনে শিশু বাজেট নতুন আঙ্গিকে প্রণয়ন করা দরকার।
সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজেবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধীদের বাজেট বলতে শুধুমাত্র সমাজকল্যা মন্ত্রণালয়ের বাজেটকে বুঝায়। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় মাসিক মাত্র ৭৫০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়, যা দৈনিক হিসাবে ২৫ টাকা। তাই আসন্ন বাজেটে প্রতিবন্ধী মানুষদের সুরক্ষা বেষ্টনী টাকার অঙ্কে বাড়াতে প্রস্তাব করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায়ন সুস্পষ্ট নয়। এমনকি ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর অতীতে কখনোই কোনো শুমারি পরিচালনা করা হয়নি। ফলে, তাদের দাবি ও চাওয়া-পাওয়া এক অর্থে হিসাবে বাইরে চলে যায়। এই বিষয়ে তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেন। যেমন – ট্রান্সজেন্ডারদের স্বল্প সুদে ব্যবসায়িক ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা, তাদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করার লক্ষ্যে নিয়োগদাতাদের সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা প্রদান, ট্রান্সজেন্ডারদের স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন নিশ্চিত করতে তাদের পরিবারদের প্রণোদনা প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, অতিমারিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নারী উদ্যোক্তার আবির্ভাব ঘটেছে। অন্যদিকে, তৈরি পোশাকশিল্পে সাম্প্রতিককালে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ক্রমহ্রাসমান, যার মূল কারণ হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আবির্ভাব। তাই নিত্য নতুন প্রযুক্তির আগমণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যমান নারী কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে বাজেটে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
জেডএ/আরএ/