২৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধ করলে খেলাপি করা যাবে না
ব্যাংকের সুদকে আয় হিসাবে দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপক মাকসুদা বেগম গত মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। এদিনই তা সব বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে এই প্রজ্ঞাপন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধের সূচি ছিল, তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে ওই গ্রাহককে আর খেলাপি করা যাবে না। পাশাপাশি ওই গ্রাহক থেকে যে পরিমাণ সুদ পাওয়া যাবে, তা ব্যাংকগুলো আয় হিসাবে দেখাতে পারবে। তবে ঋণ আদায়ের নির্ধারিত লক্ষ্যের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আদায় করতে ব্যর্থ হলে সেই গ্রাহককে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সুদও আয় খাতে নেওয়া যাবে না এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণ করতে হবে।
এ ছাড়া এই সুবিধা নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত আরও ২ শতাংশ নিরাপত্তা সাধারণ সঞ্চিতি রাখতে হবে। সাধারণত সব ঋণের ওপর ব্যাংকগুলোকে ১ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়। আর নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, যেসব ঋণ এর মধ্যে নগদ আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয় হয়েছে, তার বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি থেকে ১ শতাংশ আয় হিসাবে দেখানো যাবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্পেশাল জেনারেল প্রভিশন কোভিড-১৯ অন্য কোনো খোতে স্থানান্তর করা যাবে না।
ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে সূত্র জানা গেছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফা করা সহজ হলো। কারণ, সাধারণত পুরো টাকা আদায় না হলে তা খেলাপি হয়ে যায়। সুদও আয় খাতে নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ পেল।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলো কোনো একক গ্রাহকের কাছ থেকে ২০২১ সালে যে সুদ আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে, তার ২৫ শতাংশ যদি আদায় করতে পারে, তাহলে ওই গ্রাহকের কাছ থেকে সুদ বাবদ পাওয়া অর্থের পুরোটাকে আয় হিসাবে দেখাতে পারবে। বিদ্যমান নিয়মে কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে লক্ষ্যের শতভাগ ঋণ আদায় হলেই তখন পুরো সুদকে আয় হিসাবে দেখাতে পারে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে চলতি বছর শেষে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটতে পারে। তবে এ সুবিধা নিতে বাড়তি ২ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের বার্ষিক আর্থিক হিসাব চূড়ান্তের সময় ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশনা মানতে হবে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক বছর শেষ হবে চলতি ডিসেম্বরে।