চিন্তা করতে হবে কীভাবে খরচ না বাড়িয়ে ব্যবসা ভালো করা যায়
করোনা মোকাবিলায় সরকার চলতি অর্থবছরে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রেখেছে। তারপরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কিভাবে চাঙ্গা হবে-এর বিভিন্ন দিক নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ এর সঙ্গে কথা বলেছেন নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ-এর সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম।
ঢাকাপ্রকাশ: করোনার ধকল কাটিয়ে ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?
আব্দুল মাতলুব আহমাদ: আমরা করোনা পরবর্তী সময়ে ব্যবসার যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি তাতে খুবই আনন্দিত। আমরা দেখতে পাচ্ছি ব্যবসা বিশালভাবে বাড়ছে। এই বাড়ার পিছনের মূল কারণ হচ্ছে করোনায় দুই বছর ব্যবসা ছিলো না। তার গ্যাপ পূরণের জন্য মানুষ আসছে, আশা দেখাচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ কষ্ট অফ প্রডাকশন (উৎপাদন খরচ) বেড়ে গেছে। মার্কেট প্রাইস (বাজার মূল্য) বেড়ে গেছে। তাই দাম না বাড়িয়ে কষ্ট কমানো দরকার। সেটা করতে পারলে গুড (ভালো)। না হলে মাঝামাঝি জায়গায় আমাদের ব্যবসাকে সঠিক জায়গায় নিতে যেতে হবে। পথ দেখাতে হবে। এক কথায় ব্যবসার পরিধি বেড়ে গেছে। তাই চিন্তা করতে হবে কিভাবে খরচ না বাড়িয়ে ব্যবসা ভালো করা যায়।
ঢাকাপ্রকাশ: আগামী বাজেট কেমন হওয়া দরকার?
আব্দুল মাতলুব আহমাদ: করোনাকালের এই বাজেট বিগত দিনের মতো হওয়া দরকার। যেভাবে চলতি বাজেটে সরকার প্রণোদনা দিয়েছিলো, আমরা যাতে করোনা পরবর্তীতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে টিকে থাকতে পারি। সেই আগের মতো ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই। বরাবর এটা পেয়েছি। বিশেষ করে যারা প্রণোদনা নিয়েছে, কিন্তু দিতে পারছে না। কারণ ফ্রেইড কষ্ট (জাহাজ ভাড়া) বেড়ে গেছে। ডিউটি (শুল্ক) যাতে একটু কমানো যায়। এগুলো বিবেচনা করে সরকার আমাদের জন্য এবারও বাজেট দিবে। আমাদের কাছে নেওয়ার জন্য নয়, দেওয়ার বাজেট দিবে। আশা করি সরকার এবার আর একটা বছর দেওয়ার বাজেট দিবে।
ঢাকাপ্রকাশ: প্রণোদনায় অনেকের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে, আবার কি এটা দরকার?
আব্দুল মাতলুব আহমাদ: আর প্রণোদনার দরকার নেই। তবে যারা আগের প্রণোদনা ফেরত দেওয়ার জন্য যারা কষ্ট পাচ্ছে, দিতে পারছে না তাদেরকে একটু সময় দেওয়া দরকার। বিশেষ করে আমরা যারা প্রডাকশনে (উৎপাদন) আছি, এক্সপোর্টে (রপ্তানি) আছি। তাদের জন্য একটু ডিউটি (শুল্ক) কমিয়ে দেওয়া দরকার। অ্যাডভ্যান্স ইনকাম ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া দরকার। আমাদের কষ্ট বন্ধ করা দরকার। তবেই আমরা এগিয়ে যাব।
ঢাকাপ্রকাশ: অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন আর খেলাপি ঋণ বাড়বে না। প্রণোদনা দেওয়ার পর কেন বাড়ছে?
আব্দুল মাতলুব আহমাদ: এই সেই করে শ্রীলঙ্কা ডুবে গেছে। পাকিস্তান ডুবে ড়েছে। বিশ্বে বহু দেশ ডুবে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সবাই খেলাপি হচ্ছে না। খেলাপিদের দুইটা ভাগ আছে। ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি। অনিচ্ছাকৃত খেলাপিদের আরও সাহায্য করতে হবে। খেলাপি খেলাপি করে চিল্লাচিল্লি করে কোনো লাভ হবে না। খেলাপির সলুশন (সমাধান) আনতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আলাদা করতে হবে। অনিচ্ছাকৃত খেলাপিদের আলাদা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক বিচক্ষণ মানুষ। অবশ্যই উনি আমাদের একটা পথ দেখাবেন। যাতে আমরা খেলাপি হতে মুক্ত হতে পারি।
ঢাকাপ্রকাশ: নিটল নিলয় গ্রুপের পরিবহন ব্যবসা সম্প্রসারণ কোন পর্যায়ে আছে?
আব্দুল মাতলুব আহমাদ: ১৯৮১ সালে নিটল মটরসের যাত্রা শুরু করে বর্তমানে দেশেই গাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারতের বিখ্যাত মোটর গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাটা মোটরসের সঙ্গে যৌথভাবে কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। এ কোম্পানি কিশোরগঞ্জে ইতিমধ্যে মিনি ট্রাক তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। নিটল-নিলয় গ্রুপের উদ্যোগে ৯১ একর জমিতে স্থাপিত কিশোরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এ কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। দেশের বাজার আর গাড়ি আমদানি নির্ভর থাকবে না। এখন দেশে তৈরি গাড়ি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: দেশে তৈরি কার, পিকআপ, ট্যাক্সির দাম কেমন হবে?
আব্দুল মাতলুব আহমাদ: পিকআপ তৈরির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ব্যাটারিচালিত ব্যক্তিগত গাড়ি তৈরি হবে। এছাড়া কারখানায় গাড়ির যন্ত্রাংশ, বডিসহ সব কিছুই দেশে তৈরি করা হবে। চার চাকার প্রাইভেট কার, পিকআপ, ট্যাক্সিও করা হবে নিটল কোম্পানিতে। লাগালের মধ্যে ১০ লাখ টাকায় পাওয়া যাবে। বেশি নেওয়া হবে না। মোবাইলের মতো চার্জ সিস্টেমে চলবে এই গাড়ি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২০০টি চার্জ স্টেশন বসানো হবে। কম শুল্কে বাইরে থেকে পণ্য এনে লাভ নেই। দেশেই পার্টস তৈরি করতে হবে। সরকারকে নতুনভাবে সুবিধা দিতে হবে। কম সুদে ঋণ দিতে হবে। বাইরে থেকে মাল এনে মেড ইন বাংলাদেশ হবে না। সরকারের পলিসি পাওয়ার পর ২২টি পণ্য দেশে উৎপাদন করা হচ্ছে। তাই সরকার আরও সুবিধা দিলে মেড ইন বাংলাদেশ অসম্ভব হবে না।
জেডএ/