যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে হাওয়া
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের রমরমা অবস্থার কারণেই রপ্তানি আয়ে হাওয়া লেগেছে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ (৩৮ দশমিক ৬০) ডলার। যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান।
শুধু মার্চে ৩৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ (৪.৭৬ বিলিয়ন) ডলার এনেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। লক্ষ্যের চেয়ে অর্জন বেশি হয়েছে ৩৪ শতাংশ। যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানা গেছে।
একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ মাসের এই আয় তৃতীয় সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪.২৯ বিলিয়ন) ডলার।
শুধু তৈরি পোশাক নয়, অন্যান্য খাতেও রপ্তানি আয় বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) প্রায় সমান। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
যুদ্ধের মাসেও রপ্তানি আয়ে এই হাওয়া লেগেছে। তাই অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তাতে অর্থবছর শেষে এবার রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ।
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-মার্চ সময়ে তৈরি পোশাক ছাড়াও কৃষি প্রক্রিয়াজাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ও হস্তশিল্প রপ্তানি বেড়েছে। ফলে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরমধ্যে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
জুলাই-মার্চ সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ (৩১.৪৩ বিলিয়ন) ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এই সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১ হাজার ৭১২ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৭ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। আর ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১ হাজার ৪৩০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। আয় বেড়েছে ৩২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়েছে ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে ৭ শতাংশ। গত ৯ মাসে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৮ বিলিয়ন ডলার।
জেডএ/আরএ/