স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আয় বৈষম্য প্রকট
গত ৫০ বছরে কৃষি, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, দারিদ্র্যের হার ব্যাপক কমেছে। এসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নতি হওয়ার কথা তা হয়নি। বরং এ সময়ে আয় বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠেছে বলে জানান বক্তারা। বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) সানেমের এক সেমিনারে তারা এসব কথা জানান।
সভায় বক্তব্য দেন পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এম এম আকাশ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো সোহেলা নাজনীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, দেশ স্বাধীনের সময় ৯২ শতাংশ মানুষ গ্রামে ছিল। বর্তমানে সেটা কমে ৬২ শতাংশে নেমে এসেছে। নগরায়ণ পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না। ফলে গ্রামীণ সমস্যা শহরেও দেখা যাচ্ছে। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তা অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। আয় বৈষম্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। অথচ আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি, বৈষম্য কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘দেশে একটা ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে। শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের কারখানায় নিয়ে যেতে চাইলে তাঁরা যেতে রাজি হচ্ছেন না। সবাই ভালো পদে যেতে চান। অর্থনীতিবিদ হতে চান। কৃষি ও ম্যানুফ্যাকচারিং (উৎপাদন) খাতে তরুণদের আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সবাই যদি সেবা খাতে যেতে চান তাহলে অন্য খাত চলবে কীভাবে?’
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে জাতীয় বেকারের হার যেখানে ৪ শতাংশ, সেখানে শিক্ষিত বেকারের হার ১২ শতাংশের বেশি।
বাজারে দক্ষ মানুষের যে চাহিদা তা জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। হাইটেক পার্ক করছে। সেখানে এক কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলছে সরকার। কিন্তু সেখানে কী ধরনের কর্মসংস্থান হবে। কাদের কর্মসংস্থান হবে, আমরা কিছু জানি না।
এম এম আকাশ বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে শিক্ষার পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। বাজেটে শিক্ষা খাতে এখন যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কারিগরি শিক্ষায় জোর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ-ধনী হওয়ার গতি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। আয় বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে।
সায়মা হক বলেন, ৫০ বছরে কৃষি, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুতে বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে। সম্পদের সুষম বণ্টনও বড় চ্যালেঞ্জ বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
জেএ/এসআইএইচ/