তামাকে কর বাড়ালে রাজস্ব বাড়বে ৯২০০ কোটি টাকা: ড. আতিউর রহমান
কর কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠি তাদের আয়ের এক পঞ্চমাংশ অর্থাৎ পাঁচ ভাগের এক ভাগই অর্থ ব্যয় করে তামাকের পিছনে। তাই তামাক পণ্যের ওপর কর বাড়াতে হবে। এটা করা হলে প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক পণ্যে কর বিষয়ে প্রস্তাবনায় তিনি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। উন্নয়ন সমন্বয়ের উদ্যোগে বুধবার (৩০ মার্চ) ঢাকা রিপোর্র্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনাকালেও বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি আয় বেড়েছে। তবে প্রান্তিক ও গরীব জনগোষ্ঠিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। তারপরও তারা বেশি তামাকে ঝুঁকেছে। এটা তাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই আয় অন্যখাতে ব্যয় হলে তারা লাভবান হতো। তাই কর কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। ফিল্টারবিহীন বিড়ি ১৮ টাকা থেকে ২৫ টাকা এবং ফিল্টিারযুক্ত বিড়ি ১৯ টাকা থেকে ২০ টাকা করা দরকোর। এসবের উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হবে ১১ দশমিক ২৫ টাকা ও ৯ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘১০ শলাকার সিগারেটের মূল্য ৩৯ টাকা থেকে ৫০ টাকা, ৬৩ থেকে বাড়িয়ে ৭৫, ১০২ টাকা থেকে ১২০, ১৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। এগুলোর উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হবে সাড়ে ৩২ টাকা, ৪৮. ৭৫ টাকা, ৭৮ টাকা ও সাড়ে ৯৭ টাকা। এটা করা হলে ১৩ লাখ তামাক ব্যবহারকারি নিরুৎসাহিত হবে। প্রায় ৯ লাখ তরুনকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখা যাবে। প্রায় সাড়ে চার লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যাবে। আরও প্রায় সাড়ে চার লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু করা সম্ভব। আর বাড়তি আয় হবে ৯২০০ কোটি টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, চালের দাম বাড়তে থাকায় মধ্যবিত্তের নাখোশ হলেও কিন্তু কৃষকরা খুশি। শুধু তাই নয়, তারা তামাকের উৎপাদন থেকে সরে এসেছে। ধান চাষে এগিয়ে এসেছে। তাই সরকারের দেখা উচিৎ যেভাবে হোক তামাক উৎপাদন ও ব্যবহার যাতে কমে আসে। কারণ বাংলাদেশে দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবার তামাক পণ্যের পেছনে তাদের আয়ের প্রায় ২১ শতাংশ ব্যয় করছে। অনেক সংসদ সদস্যরা বর্তমানে তামাকের ব্যবহার কমাতে কর আরোপে আগ্রহী। ধীরে ধীরে মনের পরিবর্তন হচ্ছে তাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও মনের পরিবর্তন হয়েছে। তিনি ২০৪১ সালে ধুমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তাই তামাকমুক্ত ও ধুমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই উদ্যোগী হই।
এ সময় ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘তামাকের ব্যবহারে মাথার চুল পড়া থেকে শুরু করে পায়ের তালু পর্যন্ত সব জায়গায় প্রভাব পড়ে। তাই বিশ্বের উন্নত অনেক দেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে বেশি করে করারোপ করেছে। তিনি আরও বলেন, গরু মেরে জুতা দান করলে হবে না। তামাক কোম্পানিগুলো বৃক্ষরোপনের নামে নিজেদের ক্যাম্পেনিং করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ তামাকের ব্যবহারে প্রতি বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এটা রোধ করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব বাড়বে। শুধু তাই নয়, অনেক পরিবারের ছেলেরা তামাকে আক্রান্ত হয়ে ছিনতাই, খুন, হত্যা, ধর্ষণ এমন কোনো অস্বাভাবিক কাজ নেই যে তারা করে না। তাই সমাজ, পরিবার সুস্থ রাখতে হলে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। এরফলে সরকারেরও অতিরিক্ত রাজস্ব বাড়বে।’
জেডএ/