খুচরায় এখনো কমেনি সয়াবিন তেলের দাম
কয়েক মাস থেকে সয়াবিন তেলে নৈরাজ্য চলতে থাকায় ব্যাপকভাবে হইচই পড়েছে দেশে। দফায় দফায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় এমনকি মন্ত্রিপরিষদেও ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়েছে। এরপর উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে জুন পর্যন্ত কমানো হয়েছে ভ্যাট। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকেও তীর, রূপপাঁদা, পুষ্টি, মেঘনা মিলে অভিযানও শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে পাইকারি পর্যায়ে কিছুটা দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো খুচরা পর্যায়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। খুচরা পর্যায়ে ২ লিটার ৩৩৫ টাকা, ৫ লিটার তেল ৭৯৫ থেকে ৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
বুধবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গেলে বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, যে দামে কেনা সেই দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে সয়াবিন তেল। কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ৫ লিটার পুষ্টি ৭৯৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ৫ লিটার তীর ৭৯৫ টাকা, আর ২ লিটার ৩৩০ থেকে ৩৩৫ টাকা। অন্যান্য কোম্পানির তেলও নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কোনো লাভ তেমন হচ্ছে না।
ভ্যাট কমার প্রভাবে কোনো দাম কমেছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার দুই থেকে তিন দিন আগে কমিয়েছে ভ্যাট। এর প্রভাব এখনো পাবে না ভোক্তারা। কারণ মিলমালিকরা তো আর কম দামে এ মুহূর্তে আমাদের তেল দিচ্ছে না। পাইকারি বাজারে যে দামে কেনা বলা যায় সেই দামে খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। কারণ কোম্পানির লোক তো কম দামে দেয়নি। তারা কম দামে বিক্রি করলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীদেরও একই কথা। ভোক্তা পর্যায়ে এখনো সুযোগ আসছে না।
ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে দেশে হই-চই পড়লে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত। আর অসৎ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘উৎসবে বিশ্বে পণ্যের দাম কমানো হলে ভোক্তারা বেশি করে কিনেন। আর আমাদের দেশে চিত্র ভিন্ন। উৎসবে ব্যবসায়ীরা মজুদ করতে করতে দাম বাড়ায়। এফবিসিসিআই এর দায় নিবে না।’
আর জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘খোলা তেল ১৪৩ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে বোতলের দাম ১৫ টাকা যোগ করে ১৫৮ টাকা লিটার বিক্রি করতে হবে। মিল মালিকরা বলছে তেল আছে, ব্যবসায়ীরা বলছে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। মিলে মিলে অভিযান হবে। আগামী ২৪ মার্চের মধ্যে আগের সব এসও ক্লিয়ার করতে হবে।’
তারই অংশ বিশেষ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক ও উপ-সচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে মিলে শুরু হয়েছে অভিযান। মিলমালিকদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তেল না পাওয়া পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে দেশের সব মিল অভিযানে গিয়ে উৎপাদন ও সরবরাহের বাস্তব চিত্র দেখতে বিভিন্ন মিলে অভিযান শুরু হয়েছে।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘অসাধু চক্রের কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে তেলের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা তথ্য নিচ্ছি। অসাধুতা আশ্রয় নিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মিলে মিলে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার তীর ও রুপচাঁদা মিলে অভিযান করা হয়েছে। এস আলম গ্রুপের মিলে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বুধবারও (১৬ মার্চ) মেঘনা গ্রুপের তেলমিলে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় গত তিন মাসের উৎপাদন ও সরবরাহ দেখা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহ কমেছে। এমনকি ডিসেম্বর মাসের এসওতে এখনো তেল দেওয়া হয়নি।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে কিনা আরও কিছু পর্যালোচনা করে বলা যাবে। কারণ তারা তিন মাসের উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য দিয়েছে। তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তারই অংশ বিশেষ এসব মিলে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগামীতেও বাকি মিলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এসব অভিযানের কারণে পাইকারি বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। মৌলভীবাজারে লিটারে দুই থেকে ৫ টাকা কমেছে। খুচরা বাজারেও কমবে।’
এদিকে তেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় সোমবার (১৪ মার্চ) মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভা সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ভ্যাট কমানো কথা জানিয়েছেন। তারপরই জাতীয় রাজস্ব বোড থেকে এসআরও জারি করে সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। মঙ্গলবারও উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ থেকে ভ্যাট তুলে নিয়েছে ১০ শতাংশ।
দাম কমার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ মিলে অভিযানের কারণে বাজারে কমতে শুরু করেছে তেলের দাম। বুধবার সরকারে চেয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে ১৪১ দশমিক ৫০ টাকা লিটার বিক্রি করা হয়েছে সেলস অর্ডার (এসও)। এটা ডিলাররা কিনে মিলে তেল নিতে পারবে। সরকার নির্ধারণ করেছে ১৪৩ টাকা লিটার।’
ভ্যাটের প্রভাবের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘খুচরা বাজারে কি বলতে পারব না, তবে পাইকারি বাজারে কমেছে খোলা তেলের দাম। এটা ভালো প্রভাব বলা যায়। আর কতো কমবে? কারণ বিশ্ববাজারে বাড়তি দাম। মিলমালিকদের বেশি চিপলে অনেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারে। তখন হিতের বিপরীত হতে পারে।’
জেডএ/