কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। গত নভেম্বরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১.৩৮ শতাংশ। এ সময় গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি চড়া, যা ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশ। এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দিতে পারে। এদিকে আইএমএফের শর্তে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বিবিএসের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৮০ শতাংশ। যদিও জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪.১০ শতাংশ, নভেম্বরে তা কিছুটা কমেছে, তবে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১১.৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এর মানে গত ২০২৩ সালের নভেম্বরে ১০০ টাকায় যা কেনা যেতো, ২০২৪ সালের নভেম্বরে সেই একই পণ্য বা সেবা কিনতে ভোক্তাকে ১১১ টাকা ৩৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
জানা গেছে, ডলারসহ অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশগুলোর একটি ছিল শ্রীলঙ্কা। দুই বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির মূল্যস্ফীতির হার ঠেকে ৭০ শতাংশে। বৈদেশিক দায় পরিশোধে ব্যর্থতায় নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা দেশটির মূল্যস্ফীতি এখন ১ শতাংশেরও নিচে। দেশটির গণমাধ্যম বলছে, গত আগস্টে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ০.৫ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার দীর্ঘদিন ধরেই ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাওয়া দেশটির মূল্যস্ফীতির হারও এরইমধ্যে এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। গত মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৪ শতাংশ। যদিও এক বছর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ২৭ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান। এ সাত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলে সবচেয়ে কম মূল্যস্ফীতি এখন শ্রীলঙ্কায়। আগস্টে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতির হার ছিল মাত্র ০.৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ১.৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি রয়েছে মালদ্বীপে। ভুটানে ২.০৪, নেপালে ৩.৫৭ ও পাকিস্তানে ৯.৬৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ইকোনমিক টাইমসের খবর অনুযায়ী ভারতের সাড়ে ৫ শতাংশের বিরাজ করছে। এরমধ্যে মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানে মূল্যস্ফীতির তথ্য জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদকৃত।
গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে নয়, বরং রাজস্ব বাড়ানোর স্বার্থেই বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। তবে ৪৩টি পণ্যের উপরে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে নিত্যপণ্যের দামের ওপরে প্রভাব পড়বে না।
গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গভর্নর হিসেবে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর নিয়োগ পান। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করেন। এরপরও মূল্যস্ফীতি না কমলে নীতি সুদহার ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর আভাস দিয়েছেন গভর্নর। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোয় ঋণের সুদহার ১৬-১৭ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। ব্যাংক খাতের সঙ্গে খুচরা বাজারের বিনিময় হারের ব্যবধান ১ শতাংশে নেমেছে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোয় প্রতি ডলার লেনদেন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায়।