ই-কমার্স প্রতারণা: তারকাদের দায় কতটুকু
প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকের অভিযোগ এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বড় বড় তারকারা যুক্ত হওয়ার কারণেই মূলত প্রতারকরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে এবং নির্বিঘ্নে প্রতারণা করেছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে এসব প্রতারণায় তারকাদের দায় আছে কী না।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা শপিং, ই-অরেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন নামি-দামি তারকারা। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় বিপাকে পড়েছেন এসব তারকারা। অনেকে বলছেন, এসব দায় তারকাদের ওপরও বর্তায়। কারণ তারা ব্যবসা সম্পর্কে ধারনা নিয়ে তারপর যুক্ত হতে পারতেন।
জানতে চাইলে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, কোনো তারকা যখন কোনো কোম্পানির সঙ্গে বিজ্ঞাপনে যাবেন তখন অবশ্যই সেই কোম্পানির বিজনেস মডেল অ্যানালাইসিস করে যাবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো আইন মেনে সঠিকভাবে ব্যবসা করছে কী না সেটি বুঝে যাবেন।
সেক্ষেত্রে প্রতারণার দায় এসব তারকার ওপর পড়বে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আমার মনে হয় না প্রতারণার দায় তাদের ওপর পড়বে। কারণ আমাদের তখন ই-কমার্সের কোনো গাইডলাইন ছিল না। ৪ জুলাইয়ের পর ই-কমার্সের গাইডলাইন তৈরি হয়েছে।
জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী তাহসান খান শুভেচ্ছা দূত হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন ইভ্যালির সঙ্গে। তাহসানের সাবেক স্ত্রী মিথিলাও যুক্ত হয়েছিলেন ইভ্যালির সঙ্গে। অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ইভ্যালির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং মিডিয়া ও কমিউনিকেশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
কিন্তু ইভ্যালি গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় বিপাকে পড়েছেন এসব তারকা। তাহসান খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা এবং শবনম ফারিয়াসহ নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ইভ্যালির একজন গ্রাহক। ইভ্যালির কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করেছেন সাদ স্যাম রহমান নামের ওই গ্রাহক। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে ধানমন্ডি থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
এই মামলা নিয়ে তাহসান ও মিথিলা কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো না জানালেও শবনম ফারিয়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের শবনম ফারিয়া বলেন, আামাকে হয়রানির জন্য এই মামলা করা হয়েছে। আমি ইভ্যালিতে জয়েন করার সাতদিন পরই সরকার বাংলাদেশ ব্যাাংকের মাধ্যমে টাকা নেওয়া শুরু করেছে।
ইভ্যালিতে জয়েন করার পর কখনো প্রতিষ্ঠানটির প্রমোশনাল পোস্ট দেই নাই এমন দাবি করে শবনম ফারিয়া বলেন, উনাদের সঙ্গে আমার কন্ডিশন ছিল আমি অফিসিয়াল জব করব। পেছনে থেকে কাজ করব।
ইভ্যালির প্রতারণা আলোচিত হওয়ার পরও লেটস গো মার্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিদ্যা সিনহা মিম। এ অবস্থায় তখন মিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েই যুক্ত হই। লেটস গো মার্ট সম্পর্কেও খোঁজখবর নিয়েই সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
যে ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক কার্ডে লেনদেন বন্ধ রেখেছে তাদের মধ্যে আলেশা মার্ট অন্যতম। কিন্তু আলেশা মার্টের আলেশা কার্ডের সঙ্গে যুক্ত আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সেই আলেশা মার্টের বিরুদ্ধেও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে আলেশা মার্টের অফিস তালা মারা।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ১১০০ কোটি আত্মসাতের। এই ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ক্রিকেটের মহাতারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রতিষ্ঠানটি যখন অফিস তালা মেরে চলে যায় তখন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা মাশরাফির মিরপুরের বাসভবনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। তখন মাশরাফি তাদের জানান, ই-অরেঞ্জের সঙ্গে তার চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। তারপরও তার যতটুকু করার আছে করবেন। তবে গ্রাহকরা এখনো টাকা পাননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বিতর্কিত কোম্পানি জনপ্রিয় তারকাদের ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে থাকে। এর বড় উদাহরণ এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকে বলছেন, সাকিব-মাশরাফির মতো মহাতারকারা এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত না হলে তারা এত সহজে জনগণের আস্থা আর্জন করতে পারতো না।
আরইউ/এএস