নতুন বাজেটে ১৫ শতাংশ বেড়েছে মেট্রোরেলের ভাড়া
ফাইল ছবি
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর বর্তমানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) মওকুফ আছে, যার সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার নতুন প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ায় আগামী ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট সংযোজন হতে যাচ্ছে।
মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর বর্তমানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) মওকুফ আছে, যার সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত। অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কিছু না বলার মানে আগামী ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসছে। সংসদ চলাকালে ৩০ জুনের মধ্যে যদি মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে বাড়বে মেট্রোরেলের ভাড়া।
২০২৩ সালের শুরু থেকেই মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ওই বছরের ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (মেট্রোরেল কোম্পানি) চিঠি দেন।
পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এনবিআরের একাধিক বৈঠকও হয়। তবে ভ্যাট আরোপ থেকে এনবিআর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে। ২০২৩ সালের মে মাসে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট মওকুফ থাকবে।
এদিকে এনবিআর এই মওকুফ সুবিধা আর অব্যাহত রাখতে আগ্রহী নয়। গত ৪ এপ্রিল এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ আদেশ জারি করে জানায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে।
ভ্যাট আরোপ না করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু এনবিআর এই মওকুফ সুবিধা আর অব্যাহত রাখতে আগ্রহী নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তানুসারে সব ধরনের করছাড় কমাতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট মওকুফে অপারগতা প্রকাশ করে। গত ৪ এপ্রিল এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ আদেশ জারি করে জানায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে।
ভ্যাট বিভাগের আদেশে বলা হয়, রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে দেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলছে। সে জন্য সরকারকে প্রতিনিয়ত অর্থের জোগান দিতে হচ্ছে, যা মূলত আহরণ করা হচ্ছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মাধ্যমে। উন্নয়নের বিপুল কর্মযজ্ঞে অর্থের জোগান অব্যাহত রাখাসহ দেশের এলডিসি উত্তরণ এবং কর-জিডিপি অনুপাত কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে প্রদত্ত অব্যাহতি-সুবিধা ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
এনবিআরের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ১৯ মে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মেট্রোরেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনর্বিবেচনা করতে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। পৃথিবীর কোন দেশে মেট্রোরেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে-এমন প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের মেট্রোরেলেও ভ্যাট নেই। তাহলে আমরা কেন ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসাব?’
তবে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন তাতে মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। এ সময়ের মধ্যে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না হলে ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে।
এর আগে, প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনে দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর দেন।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। প্রস্তাবিত এ বাজেটের প্রতিপাদ্য ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার'। এবারের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) চেয়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা।
বড় অঙ্কের এ বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। আর ব্যয়ের যোগান দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার টার্গেট, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
বাজেটে মোট ঘাটতি থাকার শঙ্কা ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতে অনুদান ছাড়া সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।