যেভবে কাটা হলো ইভ্যালির দুই লকার
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির দুইটি লকার কাটা হয়েছে সোমবার (৩১ জানুয়ারি)। লকার দুইটি কাটার পর এর ভেতরে পাওয়া গেছে নগদ মাত্র ২৫৩০ টাকা। এ ছাড়া পাওয়া গেছে ১০৭টি চেক বই ও ব্যক্তিগত/পারিবারিকসহ কিছু কাগজ-পত্র।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফসিয়া সিরাতের উপস্থিতে লকার দুইটি কাটা হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশে গত ১৮ অক্টোবর ইভ্যালির পরিচালনার দায়িত্ব নেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর (মানিক) নেতৃত্বে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ।
আজ প্রথম লকারটি কাটা শুরু হয় সাড়ে তিনটার দিকে। লকারটি কাটতে গিয়ে একে একে নষ্ট হয় পাঁচটি ব্লেড। ছয় নম্বর ব্লেডে কাজ হয়।
লকার কাটার পর সেখান থেকে বের করা হয় মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৯৭টি ও সিটি ব্যাংকের ১০টি চেকবই। এ ছাড়া ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ কিছু পারিবারিক কাগজ পাওয়া যায়। এসব দেখে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দামি কিছু নেই, সব ফালতু।’
পরে ভবনটির নিচতলায় ইভ্যালির আরেকটি কক্ষে থাকা অন্য লকার কাটতে যায় দলটি। ওই কক্ষে অনেক কাগজ-পত্র, খাম, ভিজিটিং কার্ড, ম্যাগাজিন পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে থাকা আরেকটি লকার কাটা শুরু হয় চারটার পর। সাড়ে চারটার দিকে কাটা সম্পন্ন হয়। সেখানে ২ হাজার ৫৩০ টাকা, ইস্যু করা কিছু চেক ও ফাইলপত্র।
লকার দুটি কাটা হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানান, সাউথইস্ট ও সিটি ব্যাংকে ইভ্যালির ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। আদালত থেকে এ টাকা উত্তোলনের অনুমতি মিলেছে। ইভ্যালি কার্যালয় ও গোডাউনে ১৫ নিরাপত্তাকর্মীসহ ৩০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাভারের তিন গোডাউনে নিরাপত্তার জন্য ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সার্ভার খুলতেই লাগবে ৬ কোটি টাকা
সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইভ্যালির সার্ভারটি বন্ধ হয়ে আছে। সার্ভারটি চালায় আমাজন ডটকম। তারা ৬ কোটি টাকা পাবে। এ টাকা পরিশোধ না করা হলে সার্ভার খুলবে না। সার্ভার ছাড়া কোনো গ্রাহক ইভ্যালির কাছে কত টাকা পায়, কার মালামাল কোনটা, কে মাল দিয়েছে, তা জানা সম্ভব না। তিনি বলেন, এই সার্ভার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাজনের সঙ্গে দর–কষাকষি চলছে।
গেটওয়েতে ২৬ কোটি টাকা
সম্মেলনে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, গেটওয়েতে কত টাকা আছে, তা জানা নেই। তবে অর্থ লেনদেনের অনলাইন মাধ্যম নগদ, বিকাশসহ ৫টি গেটওয়েতে ২৬ কোটি টাকা আছে। সেখান থেকে ক্রেতাদের কিছু পাওনা দেওয়া যেতে পারে, তবে হাইকোর্টের আদেশক্রমে। এটা হাতে আসার কিছু প্রক্রিয়া আছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দেওয়া যাবে। তিনি বলেন, সাভারের গোডাউনগুলোতে ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মুঠোফোনসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্র আছে। আদালতের নির্দেশক্রমে এগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বিলাসবহুল গাড়িগুলো বিক্রির সিদ্ধান্ত
শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ২৪টি গাড়ির মালিকানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬টি ভ্যান। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিলাসবহুল। যেগুলোর অবস্থা ভালো, সেগুলো প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর পুরোনো গাড়িগুলো নিলামে দেওয়া হবে বা ভাড়া দেওয়া হবে বলে আমরা ভাবছি।
পণ্য ক্রেতারা প্রাধান্য পাচ্ছেন
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী জানান, ইভ্যালির পাওনাদার দুই ধরনের। একদল যারা ইভ্যালির কাছ থেকে পণ্য কিনেছেন, আরেক দল সাপ্লাইয়ার বা মার্চেন্ডাইজার। তবে ইভ্যালির কাছ থেকে যারা পণ্য কিনেছেন, তাদের বিষয়টি প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
টাকা পাচারের ’আন্দাজ’
এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এর জবাব দেওয়া কঠিন। ব্যাংকে যত টাকা পেয়েছি, তাতে টাকা পাচারের বিষয়টি আন্দাজ পেয়েছি। ধারণা করছি, টাকা পাচার হয়ে থাকতে পারে। অডিট হলে তখন বিষয়টি জানা যাবে।’ তিনি বলেন, নিরীক্ষা করতেই ছয় মাস সময় লাগবে। এরপর পাওনা পরিশোধের বিষয়টি আসবে।
ভবন মালিকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা
শামসুদ্দিন চৌধুরী জানান, রাসেল দম্পতি প্রতি মাসেই দুবাই যেত। লকারের খামে টাকা ছিল বোঝা গেছে, যা এখন নেই। এই ভবনমালিক ইভ্যালির মালামাল, আসবাব নিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে চুরির মামলা করা হয়েছে।
এমএ/এমএমএ/