সংগঠিত গোষ্ঠীই প্রণোদনা বেশি পেয়েছে

করোনার প্রভাব মোকাবেলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো খুবই কার্যকর ভুমিকা রেখেছে। তবে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা বেশি পেয়েছে সংগঠিত ব্যবসায় গোষ্ঠী। অনানুষ্ঠানিক খাতের যেসব জায়গায় এ সুবিধা দরকার ছিলো তার অনেক ক্ষেত্রেই পৌঁছায়নি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই সংকট মোকাবেলার উদ্যোগ কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে সংস্কার আনা দরকার।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ‘কোভিড-১৯ প্রণোদনা প্যাকেজ : প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এমনই মতামত জানান। এশিয়া ফাউন্ডেশন, ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও গবেষণা সংস্থা র্যাপিড যৌথভাবে অনলাইনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমন মান্নান।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমিত রোগী সনাক্ত হয়। এরপরই ২৫ মার্চ সরকার রপ্তানি খাতের কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য মাত্র ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ৫ হাজার টাকার একটি তহবিল ঘোষণা করে। এরপর করোনার প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন খাতের জন্য পর্যায়ক্রমে ২৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এসব প্যাকেজে এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা জড়িত, যা দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। সরকার ঘোষিত প্যাকেজের ৮৫ ভাগ মুদ্রা বাজার কেন্দ্রিক অর্থাৎ ব্যাংক ঋণ নির্ভর। যদিও অর্থবিভাগের দাবি ঘোষিত প্যাকেজে সরকারের বাজেট থেকে বরাদ্দ বাড়ছে।
মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশে সময়মতো সঠিক তথ্য পাওয়ার বিষয়ে ও তথ্যের গুণগত মান নিয়ে প্রায়ই যে প্রশ্ন ওঠে। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি দূর করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। যেকোনো জরুরি বা সংকটময় পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিরোধ উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ন। করোনার ক্ষেত্রে সরকার সেটাই করেছে। অবশ্যই ব্যাংক খাতের মাধ্যমে করা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তাই করেছে। একথা সত্য সুবিধা কারা পাবে, তা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। তবে পরে সেগুলো ঠিক করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির ৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ গত ডিসেম্বরে ২২তম অবস্থানে ছিলো। সেই বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের প্র্রসংশিত হয়েছে। তবে প্রণোনার সুবিধা বেশি পেয়েছে সংগঠিত গোষ্ঠী। বিশেষ করে রপ্তানি খাত।
প্রণোদনা প্যাকেজগুলোতে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ, ফার্ম মেকানাইজেশনের মত এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, যাকে করোনার প্রভাব মোকাবেলার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোটা কঠিন। অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রভাব খুবই ইতিবাচক।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য কাওসার আহমেদ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। বর্তমানে যেসব সামাজিক নিরাপত্তামুলক কর্মসূচি রয়েছে সেগুলো যথার্থভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আরও অন্তর্ভূক্তিমুলক করা সরকারের লক্ষ্য।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সকলের জন্য পেনশন, কর্মস্থলে দূর্ঘটনার জন্য বীমা ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। প্রণোদনা প্যাকেজ প্রসঙ্গে বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা সুবিধা পায়নি বা সমস্যায় রয়েছে তাদেরকে সুবিধা দেওয়ার কাজ চলছে।
ইউএনডিপি কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, শুধু সক্ষমতা বাড়ালে হবে না, প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে। যাতে ছোট, অতি ছোটদের পাশে দায়। কার কি সুবিধা দরকার সেটি এসডিজি বিষয়ক লোকালাইজেশন কর্মসূচি থেকে সহজে বের হয়ে আসবে। ফলে এসডিজির তথ্যগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপি খুবই কঠিন সময় যাচ্ছে। এখন এই মহামারী ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার হচ্ছে। ফলে পুরো বিশ্বের আর্থ-সামাজিক খাতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। তবে বাংলাদেশ সরকার করোনার প্রভাব মোকাবেলায় যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়েছে সেটা খুবই সমযোপযোগি ছিলো। যেকারণে আর্থ-সামাজিক খাতে করোনার প্রভাব যতটা আশংকা করা হয়েছিলো, ততটা প্রভাবিত হয়নি।
ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
জেডএ/
