বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার
শর্ত পূরণ করলে বিদেশে বিনিয়োগ
![](https://admin.dhakaprokash24.com/logo/placeholder.jpg)
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) একটি সার্কুলার জারি করেছে। এতে দেশের উদ্যোক্তারা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটায় (ইআরকিউ) পর্যাপ্ত স্থিতি থাকা সাপেক্ষে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে।
‘মূলধনী হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু ছালেহ মুহম্মদ সাহাব উদ্দীন সই করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত দেশের সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৯ জানুয়ারি ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-এর ২৭ নম্বর ধারার ক্ষমতাবলে মূলধনী হিসাবের লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২ জারি করেছে। তা অবহিত করতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিধিমালার আওতায় উপযুক্ত আবেদনকারী বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের প্রস্তাব বিধি ৫ এ উল্লিখিত নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং তথ্যাদিসহ আবেদনপত্র মহাব্যবস্থাপক, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় বরাবর দাখিল করা যাবে।
এ বিধির আওতায় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের রিটেনশন কোটা হিসাব থেকে বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রফতানি আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে।
বিধিমালা অনুযায়ী আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ১৫ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি রাখা হয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
কমিটির সিদ্ধান্ত অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে অবহিত করাসহ চিঠির কপি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে। বিদেশে কোম্পানি গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে। বিদেশে গঠিত কোম্পানির সব পাওনা, যেমন মুনাফা বা লভ্যাংশ, সুদ, শেয়ার বিক্রয়লদ্ধ অর্থ, বিনিয়োগ বিলুপ্তির ফলে অবশিষ্ট অর্থ, বেতন, রয়্যালটি, কারিগরি জ্ঞান ফি, পরামর্শ ফি, কমিশন, অর্জিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। বিনিয়োগের অপব্যবহারকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় আনা হবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এফলে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীদের। এ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে উদ্যোক্তরা মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে দেশের বাইরে সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছে।
আবেদনের পূর্বশর্ত ও যোগ্যতা হচ্ছে-নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব রফতানিকারির ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ স্থিতি আছে, তারা অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদনকারীকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও পাঁচ বছর কার্যকর থাকতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত বিবরণ, বিদেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিস্তারিত বিবরণ, বিদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাবকারী কোম্পানির পরিচালকদের অঙ্গীকারনামা, অনুমোদনের সময় প্রস্তাবিত বিনিয়োগ গন্তব্যের ব্যবসায়িক পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন, বিধিবদ্ধভাবে নির্ধারিত সময়ে বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বর্ধিত সময়ের মধ্যে রফতানি মূল্য ফেরত এসেছে মর্মে তফসিলি ব্যাংকের সনদ এবং সকল প্রকার আমদানির দায় নিষ্পত্তির স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সনদ জমা দিতে হবে।
বাছাই কমিটি ও অনুমোদন প্রক্রিয়া
বাছাই কমিটির সভাপতি থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ ছাড়া থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন সদস্য, বাংলাদেশে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন কমিশনার, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ একজন সদস্য, যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের নিবন্ধক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। এই কমিটির সদস্য-সচিব থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক।
এই বিধিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সার্কুলার জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে এবং বিধিমালার উদ্দেশ্য পূরণে সময় সময় প্রয়োজনীয় সার্কুলার বা গাইডলাইন জারি করতে পারবে।
জেডএ/
![Header Ad](https://admin.dhakaprokash24.com/images/single-post-anniversary.jpeg)