করোনার মধ্যে বাণিজ্য মেলা
গড়ে দর্শনার্থী ১৫ হাজার, একদিনে সর্বোচ্চ ৭৬ হাজার
করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন রোধে ১৩ জানুয়ারি থেকে বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। তাতেও সংক্রমন কমতে না থাকায় গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকালে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ওই দিনই (২১ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাণিজ্য মেলায় প্রবেশ করেন ৭২ হাজার দর্শনার্থী। শনিবার (২২ জানুয়ারি) এসেছেন ৩০ হাজার। গড়ে দর্শনার্থী ১৫ হাজার।
আগের শুক্রবারে (১৪ জানুয়ারি) এসেছিলেন ৭৬ হাজার দর্শনার্থী। পরের দিন শনিবার (১৫ জানুয়ারি) ৪০ হাজার। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী ২২৫টি স্টল ও প্যাভিলিয়নের প্রায় হাজারখানেক সেলসম্যানও মেলায় যাচ্ছেন প্রতিদিন। ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতে গড়ে ১৫ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে।
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই মেলা চলবে বলে আয়োজক সংস্থা ইপিবি থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রবেশ করেই তারা মাস্ক খুলে ভিড় করে ঘোরা-ফেরা করছে।
শনিবার মেলা প্রাঙ্গণে এমন চিত্রই দেখা গেছে। নিয়ম-নীতি না মানায় এ পর্যন্ত জন্য ২০ জনকে জরিমানাও করা হয়েছে বলে ইপিবির সচিব ও মেলা কমিটির পরিচালক মো. ইফতেখার মাহমুদ চৌধুরী জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘মেলা চলবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা চলবে।’
মেলায় প্রবেশের ঠিকাদার মীর ব্রাদার্সের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ঢাকার বাইরে বড় ব্যাপার না। কিন্তু করোনার কারণে এবারে দর্শনার্থী কম হচ্ছে।’
অপারেশন ম্যানেজার সাইদুর রহমান বাবু বলেন, ‘মানুষ একটু বিনোদনের জন্য ঘুরতে চায়। তাইতো বিধি-নিষেধ আরোপ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও তারা মেলায় আসছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা আসছেন।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ায় গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধসহ ১১ দফা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হচ্ছে।
এরপর ঢাকাপ্রকাশ থেকে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, ‘কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাণিজ্য মেলা চালার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ, মার্কেট চলছেই। মেলা খোলা জায়গায় হচ্ছে না। তবে যতটুকু খোলা আছে সেখানে মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে পরে বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এর পরের দিনই মেলার ব্যাপক দর্শনার্থীদের আগমন ঘটতে দেখা যায়।
প্রবেশের ঠিকাদার মীর ব্রাদার্সের সাইদুর রহমান বাবু জানান,
গত ১৪ জানুয়ারি দ্বিতীয় শুক্রবার মেলায় সর্বোচ্চ ৭৬ হাজার দর্শনার্থীরা আসেন।
তার পরের দিন শনিবার ছিল ৪০ হাজার জন।
আর তৃতীয় শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) উপস্থিতি ছিল ৭২ হাজার।
১ জানুয়ারি উদ্বোধনের দিন ছিল ১১ হাজার ৫০০।
এরপর প্রথম শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) ছিল ৪৪ হাজার।
সর্বশেষ শনিবার (২২ জানুয়ারি) ছুটির দিনে উপস্থিত হয়েছেন ৩০ হাজার দর্শনার্থী।
অন্যান্য দিনে গড়ে ১৫ হাজার দর্শনার্থী মেলায় আসছেন।
উল্লেখ্য, করোনার কারণে গত বছর বাণিজ্যমেলার আয়োজন স্থগিত করেছিল সরকার। এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলে গত ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন জায়গায় এ মেলার উদ্বোধন করেন। পূর্বাচলের স্থায়ী ঠিকানা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) চলছে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
ইপিবি জানায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় ১১টি দেশের ২২৭টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি খাবার দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা ভোক্তাদের কাছে বেশি অর্থ আদায় করলে ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করছে। বরাবরের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের দেড় লাখ বর্গফুট আয়তনের দুইটি হলে সব স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেডএ/এমএসপি