মেট্রোরেলে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন এডিপি পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকার
চলতি অর্থবছরের মতো আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেটেও রাজধানীতে নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেলে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
নতুন বাজেট পেশ করার আগেই এটা অনুমোদন করতে হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার চূড়ান্ত করেছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপির অনুমোদন দেওয়া হবে।
জানা যায়, মেট্রোরেল-৬ এর বাকি কাজ শেষে করতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। মেট্রোরেল-১ রুটেও প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এভাবে সবখাতে বরাদ্দ কম-বেশি করে আগামী অর্থবছরের বাজেটে নতুন এডিপির মোট আকার ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে।
নতুন এডিপি হবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। তবে মূল এডিপির তুলনায় সাড়ে ৭ শতাংশ বেশি। কারণ চলতি অর্থবছরে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, করোনার ধকল সামলাতে না সামলাতেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি চাপে পড়েছে। নিত্যপণ্য আমদানি নির্ভর হওয়ায় সব জিনিসের দাম বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিও সামলানো যাচ্ছে না। এ জন্য দেশীয় শিল্প রক্ষা ও উৎপাদনখাত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
বাজেটেও এসব খাতকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ জন্য আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হতে যাচ্ছে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে মূল এডিপি হবে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের এডিপি চলতি এডিপি থেকে ১৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বা ৭ শতাংশ বেশি। কারণ চলতি অর্থবছরে এডিপির মোট আকার ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের অর্থ ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা, বিদেশি ঋণ ৯৩ হাজার কোটি ও বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়ন ছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে বিদেশি ঋণ সাড়ে ১৮ কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
মূল এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ বাদ দেওয়া হয়। আগামী এডিপিতে স্থানীয় মুদ্রায় জোগান (সরকারি অর্থ) দেওয়া হবে ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি সহায়তা হিসেবে ৯৪ হাজার কোটি টাকা মিলবে। বাকি ১১ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন সংস্থা থেকে জোগান দেওয়া হবে।
সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপি উত্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন। তবে সভায় প্রধানমন্ত্রী বা অন্য সদস্যরা চাইলে বরাদ্দ কমবেশি হতে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোরবানি ঈদ ঘনিয়ে আসায় আগামী বাজেট পেশ করার সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আগামী ১ জুন নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন। নতুন অর্থবছরে বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেট ধরা হয়েছিলো ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে কিছুটা কমানো হচ্ছে। কারণ রাজস্ব আদায় কাঙিক্ষত পর্যায়ে আসছে না।
গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় বৈঠক ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বাজেট চূড়ান্ত করার আগে প্রবৃদ্ধির হার একটু কমিয়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ ও ঘাটতি একটু বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ করা হতে পারে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদে পঞ্চম বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটি দেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট। আকারের দিক থেকে এটিই হবে দেশের বৃহত্তম বাজেট। সর্বশেষ বাজেটের তুলনায় এর আকার হবে ১২ শতাংশ বেশি।
প্রথা অনুযায়ী জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। ৩০ জুন পাস হয় সেই বাজেট। ১ জুলাই থেকে শুরু হয় নতুন বাজেট বাস্তবায়ন। এ বছর জুন মাসের প্রথম দিনই বৃহস্পতিবার হওয়ায় রীতি অনুযায়ী সেদিনটিতেই ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের প্রাথমিক সূচি চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হয়।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য তা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেই (এনবিআর) সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কারণ আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে।
জেডএ/এসএন