‘সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করেই তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে’
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এতে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু কমবে। রাজস্বও বাড়বে এবং রাজস্ব আহরণ সহজ হবে। কারণ, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশেও এই আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন এখন সময়ের দাবি।
বুধবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৩-২৪’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব বিষয়ে আলোচকরা গুরুত্বারোপ করেন। তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) যৌথভাবে এর আয়োজন করে। কর্মশালায় বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি) ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর, সিটিএফকে বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার।
কর্মশালায় জানানো হয়, আইএমএফ ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে আসন্ন অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর রাজস্ব আদায় করতে হবে। তামাকের মতো স্বাস্থ্য হানিকর পণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়িয়ে এই লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করা সম্ভব। কারণ ১০ শতাংশ দাম বাড়ানো হলে ৪ শতাংশ রাজস্ব বাড়বে।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়, অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্ন স্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের তামাক ব্যবহারকারীকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে। বর্তমানে সিগারেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশই কম দামি সিগারেটের ভোক্তা এবং এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৭ শতাংশ।
কর্মশালায় জানানো হয় তামাক কর ও মূল্য বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে সরকারের ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে এবং ৪ লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যক্তি পর্যায়ে ৭০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হয়, বাকি ৩০ শতাংশ সরকার ব্যয় করে।
উল্লেখ্য, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। তামাক ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। একই সময়ে তামাকখাত থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তামাক কোম্পানি মাত্র দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব দেয়, বাকি রাজস্ব ভোক্তাদের কাছ থেকেই আদায় করে সরকারকে তার দেয়।
জেডএ/এমএমএ/