রমজান শুরু না হতেই বেগুন-শসা-লেবু-খেজুরে আগুন
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি থেকে শুরু করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রায় এক মাস থেকে বলে আসছেন, এবার রমজানে কোনো জিনিসের দাম বাড়বে না। যথেষ্ট খাদ্যপণ্য সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু রমজান শুরুর একদিন আগেই বেগুনের বাজারে আগুন লেগে গেছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির বেগুনের দাম এখন সেঞ্চুরি হয়ে গেছে।
শসার কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লেবুর ডজনেও ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশে চাহিদার তুলনায় খেজুর বেশি থাকলেও ইফতার শুরু করার আগেই কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। তবে আপেলসহ অন্যান্য ফলের দাম এখনো বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।
বুধবার (২২ মার্চ) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজার, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতারাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
হঠাৎ করে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা খুবই ক্ষুদ্ধ। তারা বলছেন, সরকার এত কিছু বলার পর অন্য বছরের মতোই রমজানের আগেই বেড়ে গেল বিভিন্ন জিনিসের দাম। অথচ অন্যান্য দেশে বিশ্বের ধর্মীয় বা অন্য কোনো উৎসবে কমে জিনিসের দাম।
টাউনহলের সাগর স্টোরের সাহেব আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রমজানে মুড়ির চাহিদা বাড়ে। তাই একটু দামও বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে বরিশালের চিকন মুড়ির কেজি ১৪০ টাকা, মোটাটা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। রোজার কারণে কিছুটা বেড়েছে। তবে চিড়ার দাম বাড়েনি।
কোনো জিনিসের দাম বেড়েছে কি না জানতে চাইলে একই মার্কেটের একতা জেনারেল স্টোরের সুমন বলেন. যা বাড়ার আগেই বেড়ে গেছে। বর্তমানে চিনির কেজি ১১২ টাকা, ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা, ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
পাশের ব্যবসায়ী শফিকুল বলেন, দেশি আদা ১৫০ টাকা, বিদেশি আদা ২৪০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বসুন ১৫০ টাকা, বিদেশি রসুন ১৪০ টাকা। এসব জিনিসের দাম দুয়েক দিনে বাড়েনি। যা বাড়ার আগে বেড়েছে।
টাউনহলের সবজি বিক্রেতা আব্দুল মজিদ মিয়াসহ অন্য সবজি বিক্রেতারা বলেন, বেগুন ১০০ টাকা কেজি। কালকে তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি করেছি। মোকামে বেশি দাম। কলাতিয়ার মাল ভালো, দামও বেশি। ৪০ টাকার শসা ১০০, লেবুর হালি ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৬০ কেজি। মরিচের কেজি ৮০ টাকা। তবে অন্য কোনো সবজির দাম বাড়েনি বলে তারা জানান।
এ সময় মো. ওমর নামে এক ক্রেতা অবাক হয়ে বলেন, এটা মোটেই ঠিক না। তারা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়েছে। এটা কি ফরজ যে বেগুন কিনতে হবে। মুরগির দাম বেশি।
এ সময় মুরগি ব্যবসায়ী সজিব বলেন, পোল্ট্রি মুরগির কেজি ২৭০, কর্ক ৩৭০, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা। এত দাম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোকাম থেকে না কমলে আমরা কী করব? কিছু বলতে হলে তাদেরকে বলেন।
এ সময় জাহিদুল ইসলাম নামে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, শুধু দাম যে বেশি তা না। ওজনও কম দিচ্ছে। এটা খুবই কষ্টের বিষয়। এভাবে প্রতারণা করছে, ভাবতে অবাক লাগছে।
এদিকে কারওয়ান বাজারেও রমজানের আগে বেগুন, লেবু, শসার দামও অনেক বেড়ে গেছে। এ বাজারের সবজি বিক্রেতা আইয়ুবসহ অন্যরা বলেন, বেগুনের কেজি ৮০ টাক। যা আগে ছিল ৫০ টাকা। লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা ডজন নিলে ৯০ থেকে ১৫০ টাকা। গত শনিবারে শসা ও গাজরের কেজি ৩০-৪০ টাকা ছিল। চার দিন পরই রমজানের আগে দেড় গুণ হয়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে এই শসা ও গাজর। বেশি দামের ব্যাপারে তারা আরও বলেন, আড়তে দাম বেশি। তাই কিছু বললে আড়তে বলেন। তাহলে ধরা পড়বে।
এদিকে রমজানে ইফতারির আইটেমে অনেক পরিবারে ফলেরও ব্যবহার বেড়ে যায়। তাই চাহিদাও বাড়ে। এ জন্য দামও বাড়ছে। কারওয়ান বাজারের সাব্বির নামে ফল ব্যবসায়ী বলেন, ডাল গাছযুক্ত তিউনিশিয়া খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুরসহ সব খেজুরের দাম বেড়েছে। সব খেজুরের দাম কেজিতে ৫০ টাকা করে বেড়েছে। মায়ের দোয়া ফল বিতানের মনির বলেন, এক কেজির তিউনেশিয়া খেজুর ৫০০ টাকা, অন্য খেজুরের দামও বেশি।
ফল ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, আপেল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি , মালটা ২২০ টাকা, আঙুর ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এসব ফলের দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এদিকে রমজানে মাছ, মাংসেরও চাহিদা থাকে। তাই কমছে না দাম। পোল্ট্রি মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০, পাকিস্তানি ৩৬০ ও দেশি মুরগি ৬৬০ কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, কক ৩৬০ ও দেশি মুরগি ৬০০ টাকা বিক্রি করা হয়।
গত সপ্তাহের মতোই গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে মাংস বিক্রেতা জানান। তবে অন্য জিনিসের মতো ডিমের দামও ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে।
জেডএ/এমএমএ/