‘আইএমএফ ঋণ না দিলেও কিছু পণ্যের দাম সমন্বয় হতো’
আমাদের অর্থনীতি ভালো পথেই এগোচ্ছে উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, শাসনগত সমস্যা থাকতে পারে, থাকবে। কিন্তু করোনাকালে অর্থনীতির কৌশলগত দক্ষতা দেখিয়েছি। বৈষম্য কমাতেই বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘কেউ খালি পায়ে ও কুড়েঘড়ে থাকে না। তারপরও বৈষম্য নেই তা বলব না। আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমরা কিছু পণ্যের দাম সমন্বয় করা হতো।’
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ডেভলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) উন্নয়ন সংলাপে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
ডিজেএফবি’র সভাপতি হামিদ-উজ-জামানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে ড. শামসুল আলম বলেন, আমি অর্থনীতিবিদ হিসেবে বলছি গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেসিট্যান্স, রপ্তানির ভালোই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে ট্যাক্স-জেডিপির অনুপাত এখনো কম, জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ৮ম পঞ্চবার্ষিকীতে ১৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। আমরা এখানে পিছিয়ে আছি। তবে এটা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আমি সস্তায় জনপ্রিয়তা অর্জনে কিছু বলি না। আমাদের অর্থনীতির ভালো দিক নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, অর্থনীতিবিদ সবাই প্রশংসা করছে। আমরা যে আশাবাদ ব্যক্ত করি তারা তা প্রকাশ করে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, অনেক অর্থনীতিবিদ হতাশা প্রকাশে যতো পারঙ্গম আশা প্রকাশে ততো পিফিয়ে। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এসব কথা বলছি, যেভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিলো বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে বলেছিলেন শ্রীলঙ্কার মতো হবে বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা বলেছিলাম শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকেও বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে হতে পারে। কারণ সব ক্ষেত্রেই ইচিবাচক সূচক দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ বসে পড়বে না। কারণ আমাদের দেশি বিদেশি মোট খুবই কম। আরামদায়ক অবস্থা আছি। যেখানে শ্রীলঙ্কার ১১০ শতাংশ।
আর শুধু বৈদেশিক ঋণ আমাদের ১২ শতাংশ. ভারতে ২২ ও শ্রীলঙ্কার ৭১ শতাংশের বেশি। তবে করোনাকালে আমাদের প্রবৃদ্ধি কমেছে। প্রবৃদ্ধি কমে সাড়ে ৩ শতাংশে নামলেও পরে আবার বাড়তে থাকে। সাড়ে ৭ শতাংশে উঠে গেছে।
মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি কমাতে হচ্ছে। তারপরও বলব আমদানি বৃদ্ধি খারাপ না। কারণ এতে কর্মসংস্থান হবে। তাই বলতে চাচ্ছি অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। কারণ বেসরকারিখাতেও প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমানও কমানো হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে ইতিবাচক হতে হবে। কারণ আশঙ্কা করলে হতাশা বিরাজ করে। তখন অনেকে অস্থির হয়ে উঠে। আইএমএফের ঋণে আমরা অবশ্যই সন্তুষ্ট।
কারণ পাকিস্তান ঋণ চাইলেও পাইনি। আর আমরা যা চেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। কোনো শর্তে তাদের অর্থ নেওয়া হয়নি।
কিছু ক্ষেত্রে তারা পরামর্শ দিয়েছে এই ঋণ ব্যবহারে। তাদের ঋণ বিনিয়োগে ব্যবহার হবে। এতে কর্মস্থান হবে। যতোই দিন যাচ্ছে বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে খুব সতর্কভাবেই বিদেশি ঋণ নিতে হবে।
উন্নয়ন হলেও বৈষম্য বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাপকভাবে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য বৈষম্য কমানো। দেখেন কেউ কি খালি পায়ে আছে, কেউ কুড়েঘরে বাস করে। সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। ঘরে ঘরে ফোন, টিভি ব্যবহার হচ্ছে।
কৃষকদেরও কম দামে সার, কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। দরিদ্রদেরও কম দামে খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। তবে বৈষম্য একেবারে থাকবে না, এটা বলা যাবে না।। বিশ্বেও এটা রয়েছে। কিন্তু আমি বলব এটা থাকা উচিৎ নয়।
জেডএ/এমএমএ/