বেড়েই চলেছে মাংস, ডিমের দাম
পিকনিকের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ায় গরু, খাসি,মুরগির মাংস ও ডিমের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ডিমের দাম বেড়ে ডজন ১৪০ টাকা।
অপরদিকে, খুচরা পর্যায়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ টাকা করে বাড়িয়ে খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা করা হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমলেও চায়না রসুনের দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
মাংস ও ডিমের দাম
পিকনিকসহ বিভিন্ন উৎসব জমে ওঠায় মাংস ও ডিমের দাম লাগামহীন হয়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ফারুক চিকেন, আল্লাহর দান স্টোর, জননী ব্রয়লার হাউজ, মায়ের দোয়া ব্রয়লার হাউজসহ অন্য মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
পাকিস্তানি ও লেয়ার মুরগির দামও ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ থেকে ৩০০ কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে দেশি মুরগি আগের মতোই ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে ডিমের ডজনেও ১৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, চাহিদা বাড়লেও সেভাবে সরবরাহ বেশি হয়নি। তাই দাম বাড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংসের দামও কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে মাংসের দাম বাড়লেও রুই, কাতলা, ইলিশসহ প্রায় মাছ আগের সপ্তাহের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান রুই ও কাতলার কেজি ২২০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড়ের দাম কমে ৫০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, কাজলি, বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এক কেজি ওজনের ইলিশ ১০০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, এর চেয়ে বড় হলে ১ হাজার ২০০ টাকা ও দেড় কেজির উপরে হলে ১৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ছোটগুলোর দাম একটু কম।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে বেশি মাছের উৎপাদন হওয়ায় সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মাছ।
রসুনের দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি
গত সপ্তাহে দেশি রসুনের কেজি ১০০ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ও, চায়না রসুন ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় এর দামও কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসয়ীরা জানান। দেশি আদার দাম আগের মতোই ১১০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে চায়না আদার দামও বেড়ে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
দাম বাড়লেও চিনি নেই বাজারে
১ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১১২ টাকা করা হলেও বাজারে তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আলী স্টোর, জব্বার স্টোর, ইউসুফ জেনারেল স্টোর, আল্লাহর দান ও আলী স্টোর থেকে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানানো হয় কোম্পানি থেকে দিচ্ছে না চিনি। তাই আমরা বিক্রি করছি না। তবে আগের মতোই ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকা, ২ লিটার ৩৭০ থেকে ৩৮০ ও ৫ লিটার ৮৭০ থেকে ৯০৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। মসুর ডাল ৯৫-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০, ময়দা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থিতিশীল সবজির বাজার
গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে টমেটো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিমের কেজি ২৫ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা। তবে করলা ও ঢেঁড়সের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়ে গেছে। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, মূলা ও পেঁপের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা। শসা ও গাজরের দামও কমে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, লাল ও পালং শাকের আটি ১০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
তীর, প্রাণের মিনিকেট চাল বেশি দামে বিক্রি
বস্তার চাল ৭২ টাকা বিক্রি করা হলেও সিটি গ্রুপের তীরও প্রাণ গ্রুপের প্রাণ মিনিকেট চাল বেশি দামে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। কারওয়ান বাজারের কুমিল্লা রাইস এজেন্সির আবুল হাসেম,বরিশাল রাইস এজেন্সিসহ অন্য চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে রশিদসহ অন্যরা ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি বিক্রি করলেও তীর ও প্রাণ মিনিকেট ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে।
সালমান ট্রেডার্সের মো. ফেরদৌস জানান, ১০ কেজির তীর মিনিকেট ৭৮০ টাকা ও ৫ কেজির প্রাণ মিনিকেট ৪২৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, বাসমতি ৮৮, নাজিরশাইল ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোলাও চালের দামও কমেনি। তা ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আর কোম্পানির প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, চালের দাম আর কমবে না। কারণ আমনের মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। বোরো ধান উঠলে ২৮ ও মিনিকেট চালের দাম কিছুটা কমতে পারে।
জেডএ/এমএমএ/