আদার ঝাঁজ কমলেও বেড়েছে মাংসের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে আদার ঝাঁজ কমেছে। তবে পিকনিকের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ায় গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। সরকার চিনির দাম বাড়িয়ে খোলাটা ১০৭ টাকা ও প্যাকেট চিনির কেজি ১১২ টাকা ঘোষণা করলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
এই বাড়তি দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। কোম্পানি থেকে ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের চিনি না দেওয়ায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না। তবে সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
বেড়েছে মাংস, ডিমের দাম
পিকনিকসহ বিভিন্ন উৎসব জমে উঠেছে। এ জন্য মাংস ও ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গরু ও খাসির মাংসও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ফারুক চিকেন, আল্লাহর দান স্টোর, জননী ব্রয়লার হাউজ, মায়ের দোয়াসহ অন্য মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পাকিস্তানি ও লেয়ার মুরগিও ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে ডিমের ডজনে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গুরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে রুই, কাতলা, ইলিশসহ প্রায় মাছ বিক্রি করা হচ্ছে আগের সপ্তাহের দামেই। বিক্রেতারা জানান রুই ও কাতলার কেজি ২২০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড়ের দাম কমে ৫০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, কাজলি, বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
ইলিশের দামও কমতির দিকে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১০০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, এর চেয়ে বড় হলে ১ হাজার ২০০ টাকা ও দেড় কেজির উপরে হলে ১৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ছোটগুলোর দাম একটু কম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশেই বেশি মাছের উৎপাদন হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় কম দামেই পাওয়া বিভিন্ন মাছ।
আদার দাম কমে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি
গত সপ্তাহে চায়না আদার দাম বেড়ে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি করা হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ৩০ টাকা। হচ্ছে। তবে দেশি আদার দাম আগের মতোই ১১০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের মতোই দেশি রসুনের কেজি ১০০ টাকা, চায়না রসুন ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় এর দামও কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসয়ীরা জানান।
আগের মতোই প্যাকেট আটার দাম ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০ বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জব্বার স্টোর, আল্লাহর দান ও আলী স্টোর থেকে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকা, ২ লিটার ৩৭০ থেকে ৩৮০ ও ৫ লিটার ৮৭০ থেকে ৯০৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আগের মতো মসুর ডাল ৯৫-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থিতিশীল সবজির দাম
গত সপ্তাহের মতোই টমেটোর কেজি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিমের কেজি ২৫ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা। তবে করলা ও ঢেঁড়সের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়ে গেছে। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, মূলা ও পেঁপের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা। শসা ও গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
বেশি দামেই তীর, প্রাণের মিনিকেট চাল বিক্রি
বস্তার চাল ৭২ টাকা বিক্রি করা হলেও সিটি গ্রুপের তীরও প্রাণ গ্রুপের প্রাণ মিনিকেট চাল বেশি দামে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। কারওয়ান বাজারের কুমিল্লা রাইস এজেন্সির আবুল হাসেমসহ অন্য চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে রশিদসহ অন্যরা ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি বিক্রি করলেও তীর ও প্রাণ মিনিকেট ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে।
সালমান ট্রেডার্সের মো. ফেরদৌস জানান, ১০ কেজির তীর মিনিকেট ৭৮০ টাকা ও ৫ কেজির প্রাণ মিনিকেট ৪২৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, বাসমতি ৮৮, নাজিরশাইল ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোলাও চালের দামও কমেনি। তা ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আর কোম্পানির প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এখনো বাজারে মিলছে নিা চিনি
কয়েকবার চিনি দাম বাড়িয়েও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকার পাঁচ টাকা বাড়িয়ে চিনির দাম খোলাটা ১০৭ টাকা ও প্যাকেট চিনির কেজি ১১২ টাকা বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে। যা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তারপরও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। জব্বর, ইউসুফ ইয়াসিন স্টোরসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, মিল থেকে ডিলার ও পাইকারিতে চিনি দিচ্ছে না। এ জন্য আমরাও পাচ্ছি না। কয় দিন পার বাড়তি দামে বিক্রি করার জন্যই মিল থেকে দিচ্ছে না চিনি।
জেডএ/এমএমএ/