পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের কার্যক্রম চলছে: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, অর্থপাচারের কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পাচারকারী বা পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা হতে তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশন,পুলিশের বিশেষ শাখা সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় তা সরবরাহ করে থাকে।
বিদেশে ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থ পাচার বিষয়ক বেশকিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান।
লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী আরো জানান, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কর্তৃক পাচার সংশ্লিষ্ট বেশকিছু মামলা চলমান রয়েছে। বিএফআইইউ আইনের বিধান অনুযায়ী অর্থ পাচার সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ বা তথ্য প্রাপ্ত হলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে তা সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থায় প্রেরণ করে। বিএফআইইউ হতে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা অনুসন্ধান ও তদন্তকার্য সম্পাদনপূর্বক প্রয়োজনীয় বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করে থাকে, যোগ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের শিডিউলভুক্ত অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করার ঘটনা দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ বিদেশে পাচার করার ঘটনা বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক তদন্ত করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া, হুন্ডি বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থপাচার হলে তা বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি কর্তৃক তদন্ত করা হয়ে থাকে।
অর্থপাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধ পরিকর এবং এ লক্ষ্যে সরকারের সকল সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি জানান, অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন জারি করা হয় এবং পরে ২০১৫ সালে আইনটির বিভিন্ন ধারা সংশোধন করা হয়। আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধনের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা হয়।
তিনি জানান, আইনের বিধান অনুসারে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচার মানিলন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
সরকারি দলের হাবিবর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থ বছরে (২০২২-২৩) আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) থেকে এখন পর্যন্ত কোন ঋণ পাওয়া যায়নি। একটি ঋণের বিষয়ে আইএমএফ-এর সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, চলতি অর্থ বছরে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়া গেছে। এই ঋণ ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।
একই দলের এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে চলতি অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাপান সরকার ৯২১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে।
সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাজমা আকতারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, কৃষি ঋণের সুদ মওকুফের কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ ব্যাংক আমানতকারীদের নিকট থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কৃষকদের ঋণ দেয়। আমানতকারীদেরকে ব্যাংকের সুদ দিতে হয় বলে প্রচলিত নিয়মে ব্যাংকের পক্ষে কৃষকদের মাঝে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফ করা সম্ভব হয় না।
জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, গত অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কর রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী মুদ্রানীতি ও ব্যয় সংকোচন নীতি ইত্যাদি কারণে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় কিছুটা ব্যর্থ হয়েছে।
সরকারি দলের সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের উত্তরে ডলার সংকট কমাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা সংসদে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, ডমেস্টিক ব্যাংকিং ইউনিটকে (স্থানীয় ব্যাংক) তাদের অফশোর ব্যাংকিং অপারেশন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল সংগ্রহের প্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
তিনি আরও জানান, রমজান মাসে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে এ সকল পণ্য ৯০ দিনের বিলম্ব মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থায় আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে উক্ত দেশের মুদ্রার সঙ্গে লেনদেনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত ২০২১-২২ অর্থ-বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার তৎপূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার অঙ্কে ১২ হাজার ৩৮৫ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। ২০২১-২২ অর্থ-বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের পরিমাণ ১ লক্ষ ৩ হাজার ৬৫২ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ-বছরে এর পরিমাণ ছিল ৯১ হাজার ২৬৬ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা ।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, করোনার শুরুতে সকল তফসিলি ব্যাংকগুলোকে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০২০ সালে অর্জিত নিট মুনাফার এক শতাংশের বিপরীতে বিশেষ সিএসআর খাতে ব্যাংকসমূহের বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১০৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং এখাতে ব্যাংকসমূহের বিতরণ করে ১০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ডলার রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এনএইচবি/এমএমএ/