নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশে কর্মসংস্থান কমবে

চলতি বছর বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়বে। এতে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে বিশ্বব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা বলেছে, পুরো বিশ্বেই চলতি বছরে মন্দার প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে কোনো সংস্থার কাছ থেকেই ইতিবাচক কোনো পূর্বাভাস আসেনি।
আইএলও জানিয়েছে, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের গতি অর্ধেক কমে যাবে। এ সময় দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৩ শতাংশ। অর্থনীতির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্পর্কে সবাই যা বলছে, আইএলও তাই বলেছে। অর্থাৎ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতির এই অবনতি হবে।
‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক: ট্রেন্ডস ২০২৩’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে বৈশ্বিক কর্মসংস্থান বাড়বে মাত্র ১ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর সারা বিশ্বে বেকার তরুণদের সংখ্যা প্রাক-মহামারির সময়ের নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ বেশি থাকবে। এ সময় দক্ষিণ এশিয়ায় বেকারের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ, যা গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির মূল গন্তব্য ইউরোপ। কিন্তু সেখানে মন্দাভাব থাকায় বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইএলও। শ্রমবাজারে শ্লথগতির কারণে পারিবারিক ব্যয় সেভাবে বাড়বে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের ভেতরে ও দেশে দেশে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে কারণে মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তা খুবই অসম।
আইএলওর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ভারতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের কারণে এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মন্দ নয়। তবে ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ইতোমধ্যে এক দফা কমানো হয়েছে। আর্থিক খাতে মাত্রাতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও এই অঞ্চলে বিশ্ববাজারের প্রভাব যে কতটা, তা গত এক বছরে বোঝা গেছে। বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়লে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশের সরকারকে বিপুল ভর্তুকি দিতে হয়। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ে।
ঝুঁকির খাত হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তানে গত বছর প্রলয়ঙ্করী বন্যা হয়েছে।
আইএলওর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে ছিলেন। অর্থাৎ কর্মসংস্থানে যতটা গতি এসেছে, তা হয়েছে মূলত অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে কর্মজগতে একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ব্যবসায়িক পরিবেশেও একধরনের বিষণ্নতা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এতে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমেছে।
এ ছাড়া ২০২২ সালে বিশ্বের ২১ কোটি ৪০ লাখ শ্রমিক চরম দারিদ্র্যের কবলে ছিলেন। অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায়, তাদের দৈনিক মজুরি ছিল ১ দশমিক ৯০ ডলারের নিচে।
আরএ/
