উদ্বোধনের আগে ব্যয় বাড়ল বঙ্গবন্ধু টানেলের
আগামী মার্চে উদ্বোধন করা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্প। প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। তারপরও শেষ হচ্ছে না চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্রগ্রাম শহরকে অন সিটি টু টাউন করার কাজ।
গত ডিসেম্বরে শেষ করার জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছিল প্রথম সংশোধনের সময়। তারপরও হলো না। আরও এক বছর সময় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা। এজন্য সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে সব কাজ শেষ করে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধনের কাছাকাছি সময়েও সংশোধন করে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি কেন? জানতে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পরে সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনিও ফোন রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেতু বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, টানেলের দুই প্রান্তে পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার সার্ভিস তৈরি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে। এজন্য সংশোধন করা হচ্ছে। সরকার প্রধান যেদিন সময় দিবেন সেদিন টানেলের উদ্বোধন আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চে হবে। সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য (সচিব) ও পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, হ্যা টানেল প্রকল্পের পরিকল্পনায় ভুল ছিল। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে সব কিছু তুলে ধরা হয়নি। প্রকল্প মূল্যায়ন সভায় (পিইসি) আমিও সেতু বিভাগে এই প্রশ্ন করেছিলাম। কেন ফিজিবিলিটি স্টাডিতে পুলিশ স্টেশন ও ফায়ার সার্ভিস যুক্ত করা হয়নি। আসলে পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনায় ভুল ছিল।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। কাজ হবে প্রয়োজনে সংশোধন হবে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন, সংশোধন নীতিমালা সংশোধন করা হবে।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর সারা দেশের উন্নয়নে আটটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে দেশের ইতিহাসে প্রথম নদীর নিচ দিয়ে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার কর্ণফুলি টানেলও রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরকালে একটি এমওইউ সই করেন। এরপরই বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে সরকার ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। যা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ।
প্রকল্পটি শেষ করার জন্য চলতি অর্থবছরে (২০২২২-২৩) ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছে। তারপরও হচ্ছে না। সময় এক বছর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এজন্য সংশোধন করতে হচ্ছে। তবে এর কারণ হিসেবে সেতু বিভাগ থেকে বলা হয়েছে সেতুর দুই পাশে পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এই দুই কাজে ১৬ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হবে। অন্যান্য কিছু কাজ রয়েছে। এসব বাস্তবায়নের জন্য সময় বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে গত ১৭ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় কিছু ব্যাপারে সংশোধন করে মঙ্গলবার একনেক সভায় সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এতে সরকারের অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করে এক লাফে ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়। আর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়ে সম্পন্ন হয়নি।
তাই আবারও এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলো। পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও ১০ হাজার ৩৭৪ থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকায় অর্থাৎ ব্যয় ৩৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হলো। বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হলো।
সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় ১৬ দশমিক ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার সার্ভিস স্থাপন করা হবে। আনোয়ারার দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগের কথা বিবেচনায় নতুন করে অ্যাপ্রোচ সড়কও যুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া, সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিকসামগ্রী, আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জা সামগ্রী ক্রয় করা হবে। সার্ভিস এরিয়ার সরকারি খাত থেকে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভ্যাট ও আইটির জন্য ১৩ শতাংশ হারে সংস্থান রাখা হয়েছিল। পরে এ হার পর্যায়ক্রমে বেড়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এই ১৫ শতাংশ হার অনুযায়ী অবশিষ্ট চুক্তিমূল্যের ওপর ভ্যাট ও আইটি খাতে সংস্থান রাখার জন্য ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলেও কিছু ব্যয় বাড়ছে।
জেডএ/এমএমএ/