স্থিতিশীল চাল মাছ-মাংসের দাম, তেল লিটারে বেড়েছে ৮ টাকা
পাঁচ লিটার ভোজ্যতেল গেল সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৭২০ টাকা। আজ তা ৭৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটারে বেড়েছে ৮ টাকা। তবে আগের চেয়ে ৪ টাকা কমে পেঁয়াজের কেজি ২৮ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি করছে বিক্রেতারা। চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংস, মুরগি, ডিম, শাক-সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে সরকার বিধিনিষেধ জারি করলেও আগের মতোই বেচা-বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েনি বাজারে। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
আগের দামেই চাল বিক্রি:
গত সপ্তাহে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বাড়লেও এ সপ্তাহে দাম বাড়েনি। কারওয়ান বাজারের মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মো. আবুল কাসেম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, এক সপ্তাহে কোনো চালের দাম বাড়েনি। আগের দামেই কেজি প্রতি মিনিকেট ৬০ থেকে ৬১ টাকা, বিআর-২৮ ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা, পারিজা ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। চাটখিল রাইস এজেন্সির বেলাল হোসেনও জানান, আগের দামেই মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪৮ থেকে ৪৯, নাজিরশাইল ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। একই বাজারের এমআর টেড্রার্সের আনিছ বলেন, সব চাল আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বরিশাল রাইস এজেন্সির আয়ুব আলী জানান, দাম বাড়েনি-কমেও নি। আগের দামেই মিনিকেট ৬০ টাকা, আটাশ ৪৯ থেকে ৫০ টাকা, বাসমতি ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষিমার্কেটের সাপলা রাইস এজেন্সির মাঈনুদ্দিনও বলেন, ‘আগের দামে পাইকারি বাজারে বিভিন্ন চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে একই চাল পাইকারি বাজারের চেয়ে ৪-৫ টাকা বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান। তারা আরও বলেন, বাজার ভেদে একই চাল খুচরা বাজারে ২-৩ টাকা কম বেশি বিক্রি করা হয়।
আগের দমেই গরু-খাসির মাংস:
গত সপ্তাহের মতোই গরু ও খাসির মাংসের দাম এ সপ্তাহে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় খাসির মাংসের দোকানের নুরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগের সপ্তাহের মতোই এ সপ্তাহে আগের দামেই খাসির মাংসের কেজি ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ক্রেতা কম। একই বাজারের মেসার্স খোকন এন্টারপ্রাইজের খোকন বলেন, গরুর মাংসের কেজি ৫৮০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। পরিমাণ বেশি হলে কেজি প্রতি ৫৫০ টাকাও রাখা যাবে বলে জানান তিনি। সোহাগ মাংস বিতানের সোহাগ জানান, গরুর মাংস ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে বিধিনিষেধের কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান তারা।
স্থিতিশীল ডিম-মুরগি ও মাছের দাম:
এ সপ্তাহেও গত সপ্তাহের দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে বলে জননী মুরগীর আড়তের আব্দুল ওহাব ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান। তিনি বলেন, দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা, ব্রয়লার ১৮০ টাকা, পাকিস্তানী কক ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে চার্টে দাম লিখা আছে ৩০০ টাকা। জনপ্রিয় পোলট্রির ইলিয়াছ বলেন, ‘আগের মতোই ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কক ৩০০ টাকা, সাদা কক ২৭০, লাল লেয়ার ২৪০ ও দেশি মোরগ-মুরগি ৫২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আল্লাহর দান চিকেন হাউজের মনির বলেন, পাকিস্তানি কক ২৯০, সাদা কক ২৯০ টাকা, ব্রয়লার কেজি ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বাজারে একই মুরগি খুচরা বাজারে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত কম-বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।
এদিকে আগের মতো মাছের বাজারও স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রতন বলেন, রুই, কাতল, চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ আগের দামই বিক্রি করা হচ্ছে। আকার ভেদে রুই ও কাতল ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। চিংড়ি আকার ভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি শিং ৭০০ টাকা কেজি, দেশি কই ৫০০ টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া দেশি শৈল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, চাষের শিং ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং আইড় মাছ আকারভেদে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
স্থিতিশীল ডাল চিনি আটার দাম:
অন্যান্য জিনিসের মতো নিত্যপণ্যের মধ্যে আগের মতোই চিনি ৮৫ টাকা কেজি, দুই কেজি আটা ৯০ টাকা, মুগ ডাল ১১০ টাকা, মসুর ১১০, ছোলা ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের। পাইকারি বাজারে দুই কেজির আটা ৮২ টাকা ও চিনি ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারাও বলছেন, এ সপ্তাহে জিনিসের দাম তেমন বাড়েনি। তেল ছাড়া আগের দামেই সব পণ্য কেনা যাচ্ছে।
তেল লিটারে বেড়েছে ৮ টাকা:
কারওয়ান বাজারের নিউ সোনারগাঁও জেনারেল স্টোরের রিপন জানান, তেলের দাম প্রতি লিটার বেড়েছে আট টাকা। আগে ৫ লিটারের বোতল ৭২০ টাকা কেনা হলেও আজ তা ৭৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে। হঠাৎ কেন বাড়তি দাম? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেনার উপর সামান্য লাভ ধরে বিক্রি করা হয়। যেহেতু বেশি দামে কিনতে হয়েছে, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে ইউসুফ জেনারেল স্টোরের সুজন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তেলের দাম প্রতি লিটারে শুধু ৮ টাকা বেড়েছে। বাকি সব পণ্যই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে।
কমের দিকে সবজির বাজার:
শীত মৌসুমে বিভিন্ন সবজির চাষ বেশি হওয়ায় কোনো না কোনো পণ্যে দাম কমছে। গত সপ্তাহের চেয়ে প্রতি কেজিতে চার টাকা কমে পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩৫ চাকা। আলুর দামও কমে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। আগের মতোই টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুণ ৪০ থেকে ৫০, প্রতি পিস ফুল কপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গাজর কেজি ৪০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, শাকের আটি ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া দেশি আদা ৮০ টাকা কেজি, চায়না আদা ১২০ টাকা, দেশি রসুন ৫০ টাকা ও চায়না রসুন ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
জেডএ/এএস