জামানত ছাড়াই ৬২ কোটি টাকা ঋণ
উপযুক্ত জামানত না থাকায় অনেক কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ পান না। গত দুই বছরে এমন উদ্যোক্তাদের প্রায় ৬২ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জামানতবিহীন এঋণ সুবিধা দিতে দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চার শতাংশ সুদে এই ঋণের সুযোগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, গত বছর ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম এর আওতায় ৩০৪ জন উদ্যোক্তাকে ৩৩ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে ২৭৪ জনকে ২৯ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
উদ্যোক্তাদের চাহিদা বিবেচনা করে এই ঋণ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ থেকে সম্প্রতি দ্বিগুণ অর্থাৎ এক কোটি টাকা করা হয়েছে। জামানত ছাড়া ঋণ ব্যাপকভাবে প্রচার হলে উদ্যোক্তারা আরও এই ঋণ সুবিধা পাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও অনেক কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা জামানত না থাকায় ঋণ পাচ্ছে না। অপরদিকে করোনা মহামারীতে অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ে। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (সিজিএস) ইউনিটও গঠন করা হয়েছে। ঋণ বিতরণের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ম্যানুয়াল-২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই আলোকে ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বা বিনিয়োগ গ্যারান্টির পরিমান সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্যারান্টির মেয়াদ ধরা হয়েছে এক বছর।
এদিকে উদ্যোক্তাদের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিজিএস ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক এস এম মোহসীন হোসেন গত ৩০ ডিসেম্বর একটি সার্কুলার জারি করেন। তাতে সর্বোচ্চ ঋণের পরিমান ৫০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা করা হয়েছে।
এই ঋণ দিতে চুক্তিবদ্ধ ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তিও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিদায়ী বছরে অগ্রণী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইউসিবিএল রাকাব, ট্রাষ্ট ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিডি ফাইন্যান্স, আইডিএলসির মাধ্যমে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছে। আর ২০২০ সালে অগ্রণী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, সিভিসি ফাইন্যান্স ও আইডিএলসির মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া চুক্তিবদ্ধ অন্য ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যাংকের মধ্যে জনতা, অগ্রণী, রুপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে পূবালী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, এক্সিম ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাষ্ট, যমুনা, ওয়ান, সাউথ বাংলা এগ্রা এন্ড কমার্স ব্যাংক, সাউথইষ্ট, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাষ্ট ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ডাচ বাংলা, ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও স্টেট ব্যাংক অব এশিয়া। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানী ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড।
সূত্র আরও জানায়, করোনার প্রকোপ কমলে দেশে রোড শো করা হবে। এছাড়া দেশের তফসিলভূক্ত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়েও কর্মশালার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘যাদের জামানত নেই তারা যাতে ঋণ বা বিনিয়োগ পেয়ে ভালো করে ব্যবসা করতে পারে সে জন্য এই তহবিল করা হয়েছে। ঋণের পরিমান কম হলেও এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে। এটা যাতে আরও বাড়ে সেজন্য চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আরও তৎপর হতে হবে। কারণ ভালো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১০টাকা, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষক, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী ও ক্ষ্রদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত পুন:অর্থায়ন স্কিমের উদ্যোক্তাদেরও এর আওতায় আনা হয়েছে। বুধবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে।
জেডএ