বৃহস্পতিবারের বাজারদর
বাড়তি চালের দাম সবজিতে স্বস্তি
আমন ধানের মৌসুম শেষ না হলেও বেড়েই যাচ্ছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। তবে আগের মতোই ডিমের ডজন ১০৫ টাকা, গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়। ভোজ্যতেল, আটা, ডাল, চিনিও আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু শীতের সবজির দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এরফলে কেজি প্রতি ৫০ টাকার মধ্যে টমটো, শিমসহ যে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে।
দাম কমায় ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
চালের কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা:
গত সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় এ সপ্তাহেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মো. আবুল কাসেম ঢাকাপ্রকাশকে জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব চালে বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। মিনিকেট ৬০ থেকে ৬১ টাকা, বিআর-২৮ কেজি ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা, পারিজা ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতি বছরে মাঘ মাসে চালের দাম কমে। কিন্তু এবারে সেই মাস থেকেই বাড়তি দাম। কমছে না। কি করলে কমবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমদানি না করলে চালের দাম কমবে না। তাই ভোক্তাদের স্বার্থে চালের দাম কমাতে হলে আমদানি করতে হবে।
চাটখিল রাইস এজেন্সির বেলাল হোসেনও চালের দাম বেড়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, বাজারে চালের বাজার চড়া। মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪৮ থেকে ৪৯, নাজির চাল ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। এই বাজারে মোটা চাল বিক্রি তেমন না। তাই রাখাও হয়না। একই বাজারের এমআর টেড্রার্সের আনিছ খানও বলেন, সব চালের দাম চড়া।
কৃষিমার্কেটের সাপলা রাইস এজেন্সির মাঈনুদ্দিনও বলেন, সব চালের দাম বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। আমদানি করলে কমবে চালের দাম। পাইকারি বাজারের এই চাল প্রতি কেজিতে খুচরা বাজারে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান।
গরু খাসির মাংস স্থিতিশীল:
গত সপ্তাহে গরু ও খাসির মাংসের দাম চড়া থাকলেও এ সপ্তাহে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় খাসির মাংসের দোকানের নুরুল ইসলাম ঢাকা প্রকাশকে বলেন, আগের সপ্তাহে কিছুটা বাড়লেও এ সপ্তাহে আগের দামেই ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। একই বাজারের মেসার্স খোকন এন্টারপ্রাইজের খোকন বলেন, ৫৮০ টাকা গরুর মাংস কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। বেশি নিলে ৫৫০ টাকা কেজি রাখা যাবে বলেও জানান তিনি। সোহাগ মাংস বিতানের সোহাগ জানান, গরুর মাংস ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থিতিশীল ডিম-মুরগি ও মাছের দাম:
গত সপ্তাহের দামেই এ সপ্তাহে ডিম বিক্রি হচ্ছে বলে ঢাকাপ্রকাশকে জানান জননী মুরগীর আড়তের আব্দুল ওহাব। তিনি বলেন, দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা, ব্রয়লার ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি কক ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে চার্টে বেশি দাম ৩০০ টাকা লিখা আছে। জনপ্রিয় পোলট্রির ইলিয়াছ বলেন, আগের সপ্তাহে প্রতি কেজি মুরগির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি বাড়ে। তবে এ সপ্তাহে বাড়েনি। আগের মতোই ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কক ৩০০ টাকা, সাদা কক ২৭০, লাল লেয়ার ২৪০ ও দেশি মোরগ-মুরগি ৫২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকারি বাজারের দামের সাথে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে খুচরা বাজারে ডিম ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে মুরগির মতো মাছের বাজারও স্থিতিশীল বলে জানান বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রতন বলেন রুই, কাতল, চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ আগের দামই বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আকার ভেদে রুই ও কাতল ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকার ভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আর দেশি শিং ৭০০ টাকা কেজি, দেশি কই ৫০০ টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া দেশি শৈল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল ডাল তেল চিনি আটার দাম:
অন্যান্য জিনিসের মতো নিত্যপণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল আগের মতোই রুপচাদা পাঁচ লিটার ৭৩০ টাকা ও বসুন্ধরা ৭০০ টাকা, চিনি ৮৫ টাকা কেজি, দুই কেজি আটা ৯০ টাকা, ডাল ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের জেনারেল স্টোরের আব্দুল কাদের। একই কথা জানান, কমলা ট্রেডিং এর সুমন। তিনি বলেন, গায়ের মূল্যের চেয়ে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচ লিটারে ৪০ টাকা কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মুগ ডাল ১১০ টাকা, মসুর ১১০, ছোলা ৭০ টাকা, দুই কেজির আটা ৮২ টাকা ও চিনি ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারাও বলছেন, এ সপ্তাহে জিনিসের দাম তেমন বাড়েনি।
সবজির কেজি ৫০ টাকার নিচে:
শীত মৌসুমে বিভিন্ন সবজির চাষ বেশি হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। তারা বলছেন, আগের সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা কমে টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বেগুণ ৪০ থেকে ৫০, প্রতি পিস ফুল কপি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ৪০ টাকা কেজি, শসা ৩০ টাকা, বিভিন্ন শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় সবজির কেজি ৫০ টাকার নিচে নেমেছে বলে রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের শফিক জানান।
জেডএ/এএস