ঘোষণার ৪ দিন পরও বাজারে নেই নতুন দামের ভোজ্যতেল
ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমলেও ভোক্তারা চার দিনেও তার সুফল পাননি। বাজারে এবং খুচরা বিক্রেতার কাছেও পাওয়া যাচ্ছে না দাম কমা বোতলজাত সয়াবিন তেল।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা এখনো আগের রেটের তেল ৫ লিটার ৯২০ টাকা, ২ লিটার ৩৮০ টাকা ও এক লিটার ১৯০ টাকা বিক্রি করছেন। তারা বলছেন, কোম্পানি থেকে না দিলে আমরা কি করব। তারা কম দামের তেল দিলে আমরাও কম দামে বিক্রি করব।
মিলমালিকরা বলছেন, ঘোষণা দিলে তো দিনে দিনে আসবে না। এ সপ্তাহে আসবে, অপেক্ষা করতে হবে। বুধবার ও বৃহস্পাতিবার রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহাল্লা থেকে শুরু করে কারওয়ান বাজার, টাউনহল বাজার ঘুরে এবং খুচরা বিক্রেতা ও মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের ২ নং রোডের মনজুর ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, দোকানে তেল কিনতে গোলেও আগের দামেই কিনতে হচ্ছে। লিটারে যে ১৪ টাকা কমালো সেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
একই এলাকার মুদি দোকানি শাওন জানান, মঙ্গলবার থেকে লিটারে ১৪ টাকা কমে ১৭৮ টাকা বোতল তেল বিক্রি করার কথা। কিন্তু তিন দিন চলে গেলেও ১৭৮ টাকা লিটারের তেল এখনো পাচ্ছি না।
কখন পাওয়া যাবে তাও জানি না। দাম বাড়লে তো দ্রুত কার্যকর হয়। কিন্তু দাম কমানো হলে সহজে বাজারে পাওয়া যায় না তেল।
আদাবর থানার শেখেরটেক ৬নং রোডের ব্যবসায়ী রুবেল জানান, নতুন রেটের তেল এখনো পাইনি। তাই বিক্রি করা যাচ্ছে না লিটারে ১৪ টাকা কমে যাওয়া তেল। আজিমপুরের পলাশীবাজারের রাকিব হোসেনও একই কথা জানান ঢাকাপ্রকাশ-কে। তিনি জানান নতুন রেটের তেল আসেনি। তবে আগের তেল এক লিটার ১৮০ টাকা, ২ লিটার ৩৯০ টাকা ও ৫ লিটার ৮৯০ টাকা বিক্রি করছি। তিনি আরও জানান, শুনেছি কোম্পানি দাম কমিয়েছে লিটারে ১৪ টাকা। আজকালের মধ্যে আসবে। তখন আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।
মোহামৃমদপুরের পাইকারি বাজার কূষি মার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কই এখনো কম দামের তেল পায়নি। খবরে তো শুনেছি মিল মালিকরা চার দিন আগে ঘোষণা দিয়েছে। তাও পেলাম না। আমরা কি করব। কম দামে পেলে আমরাও কম দামে বিক্রি করব। মোহাম্মদপুরের টাউনহলের মনির জেনারেল স্টোরের আনোয়ার বলেন, ১৪ টাকা কমে যাওয়া তেল এখনো তো পেলাম না। চার দিন চলে গেল। পাঁচ লিটার তো দূরের কথা এক লিটার, দু লিটার কোনো তেলই এখনো পাইনি। কোম্পানির লোক শুধু বলছে আসবে অপেক্ষা করেন। তাই আমরা অপেক্ষায় আছি। পেলে নতুন দামে বিক্রি করব।
কারওয়ানবাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের শাহ আলম বলেন, মিলমালিকরা বললেও এখনো এক লিটার ও ২ লিটার নতুন রেটের তেল দেয়নি। তাই আমরাও বিক্রি করতে পারছি না। তবে ফ্রেশ, তীর ৫ লিটার পাওয়া গেছে, দাম ৮৮০ টাকা। কিন্তু বসুন্ধরা ও রুপচাদা এখনো পাইনি। তবে দিব দিব বলছে। পেলে তখন কম দামে বিক্রি করা হবে।
একই কথা জানান ওই বাজারের রতন জেনারেল স্টোরের মো. রতন। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এক লিটার ও ২ লিটার তেল নেই। কেন নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোম্পানি থেকে না দিলে আমরা কোথায় পাব। তারা শুধু ৫ লিটার তেল দিয়েছে, দাম, ৮৮০ টাকা। তাও সব কোম্পানির পাইনি।
কম দামের তেল বাজারে না পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা ঢাকাপ্রকাশ -কে বলেন, দিনে দিনে সব তো আর আসে না। এ সপ্তাহের মধ্যে আসবে। মঙ্গলবার থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আসতে তো সময় লাগবে। একটু অপেক্ষা করেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমানো হলো। যা পরের দিন মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে প্রতি লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৯২ টাকা থেকে কমে ১৭৮ টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে ৫ লিটারের দাম করা হয়েছে ৮৮০ টাকা, যা আগের দাম ছিল ৯৬০ টাকা। আর খোলা তেল প্রতি লিটার বিক্রি করা হবে ১৫৮ টাকা। যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা লিটার, প্রতি লিটারে কমেছে ১৭ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হায়দার সাক্ষাৎ করে দাম কমানোর এই সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু চারদিন চলে গেলেও এখন পর্যন্ত নতুন দাম কার্যকর হয়নি।
এনএইচবি/আরএ/