রাজস্ব ফাঁকি রোধ করবে তামাক পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং
তামাকজাত পণ্যের মোড়কের সাইজ ভিন্নতার সুযোগ নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে বিভিন্ন তামাক কোম্পানি। একই কারণে তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের ক্ষেত্রেও বিঘ্নতা ঘটছে। তামাক পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন ও সুনির্দিষ্ট কর আরোপ সম্ভব হলে কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি রোধ হবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। যা দিয়ে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন সহজ ও কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। টোব্যাকো কন্টোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভির্সিটি, ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট যৌথভাবে সেমিনার আয়োজন করে।
মূল প্রবন্ধে ফারহানা জামান লিজা বলেন, দেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ এবং এরাই তামাক কোম্পানিগুলোর প্রধান টার্গেট। সস্তা ও সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত ক্ষয়-ক্ষতি অনেক বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধোঁয়াযুক্ত তামাক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ছিল ২৬,৩৫৫ কোটি টাকা যেখানে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ছিল মাত্র ৩১.৯৯ কোটি টাকা। মূলত ধোঁয়াবিহীন তামাকের রাজস্ব আদায়ে উদাসীনতা, অধিকাংশ তামাক কোম্পানি করের আওতায় না থাকা ইত্যাদি কারণে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহারকারী বেশি হওয়া সত্ত্বেও এর থেকে সেই অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। তামাক পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং এর মাধ্যমে দেশের ছোট বড় সকল তামাক কোম্পানিকে করের আওতায় আনা সম্ভব। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর যথাযথ বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পরে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক কর আদায়ের স্তর ও প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। এগুলো সংশোধন ও তামাক কর ব্যবস্থায় আধূনিকায়ন কিছু সমস্যা দুর করতে হবে। এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে তামাক কোম্পানির কর ফাঁকির বিষয় ও আমাদের প্রস্তাবনা সহজভাবে তুলে ধরতে হবে। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন, খুচরা ও খোলা তামাক পণ্য বিক্রয় বন্ধ ও কর বৃদ্ধি সম্ভব। এটি বাস্তবায়নে এনবিআরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিৎ বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি। সেমিনারে বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধি, বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষনা ব্যুরো’র ফোকাল পার্সন অধ্যাপক ড. রুমানা হক। আলোচনা করেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কান্ট্রি ম্যানেজার-বাংলাদেশ নাসির উদ্দীন শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস. এম আবদুল্লাহ, যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতনিধি সুশান্ত সিনহা। সেমিনারে সঞ্চালনা ও শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন টোব্যাকো কন্টোল রিসার্চ সেল’র সদস্য সচিব মো. বজলুর রহমান এবং মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা।
এসএম/এএস