বাজেটে ১৪টি এসএমইবান্ধব প্রস্তাব গ্রহণ
নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ৫০টি প্রস্তাব দিয়েছিল এসএমই ফাউন্ডেশন। এরমধ্যে ১৪টি এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এ জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে শিল্পমন্ত্রণালয়ের এ প্রতিষ্টানটি। রবিবার (১৯ জুন) এসএমই ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনার জন্য প্রধামন্ত্রীর এবং অর্থমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের বাজেটে এসএমই খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেওয়া ১৪টি প্রস্তাবনা পূর্ণাঙ্গ বা আংশিকভাবে গৃহীত হওয়ায় ফাউন্ডেশন মনে করছে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের এসএমই উদ্যোক্তারা তথা এসএমই খাত নানাভাবে উপকৃত হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশন জানায়, এসএমই উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে অর্থায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জও থাকবে বলে মনে করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রতি বছর প্রাক বাজেট আলোচনায় এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক এসএমই খাতের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিবেচনার জন্য আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অন্যান্য সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে প্রস্তাবনা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, ট্রেডবডির কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে ১৮টি অ্যাসোসিয়েশন বা ট্রেডবডি থেকে এসএমই খাত সংশ্লিষ্ট ১২০টির বেশি প্রস্তাবনা পাওয়া যায়। পরে এসএমই অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেডবডির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌক্তিকীকরণ সভার মাধ্যমে ৫০টি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রাক বাজেট আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়।
বাজেটে যে ১৪টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে:
১. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিরক্ষণে এই শিল্পের জন্য তৈরি কয়েকটি পণ্য (ফিনিস প্রোডাক্ট) আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ককর বৃদ্ধি করা হয়েছে।
২. অ্যাগ্রোপ্রসেসিং এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাকে ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৩. হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের সব ধরনের পণ্য, যা কেবল শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত হবে—এমন উদ্যোক্তাদের ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৪. এসএমই খাতের ইনফরমাল উদ্যোক্তাদেরকে ফরমাল হওয়ার উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে এক ব্যক্তি কোম্পানির (ওপিসি) করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
৫. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিরক্ষায় শিল্পের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কতিপয় উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
৬. পেপারকাপ প্রস্ততকারী শিল্পের সুরক্ষায় এই শিল্পের কর্তৃক তৈরি কয়েকটি পণ্য (ফিনিস প্রোডাক্ট) আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে।
৭. পাওয়ার টিলারের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ফাউন্ড্রি শিল্পে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত স্ক্র্যাপ সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৮. নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন এসএমই খাতের কোনও প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে এই প্রতিষ্ঠানের আয়কে করমুক্ত রাখা হয়েছে।
৯. স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য কেবলমাত্র আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত অন্য সব ধরনের রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে এবং স্টার্টআপ কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয়ের বিধান রাখা হয়েছে।
১০. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারের জন্য স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয় সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার ও টার্নওভার করহার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
১১. মুড়ি ও চিনি ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
১২. শিল্পোন্নয়ন উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
১৩. সিএমএসএমই খাতের ঋণ ও অগ্রিমের নিট স্থিতির পরিমাণ প্রতিবছর কমপক্ষে ১ শতাং বৃদ্ধিসহ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
১৪. নতুন এসএমই উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জামানতবিহীন এবং সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতসহ পুনঃঅর্থায়ন করার নির্দেশা দেওয়া হয়েছে।
জেডএ/