বিটকয়েনের মূল্যে রেকর্ড ধস
ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের দরপতনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে ডিজিটাল এ মুদ্রার। রোববার (১৯ জুন) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে প্রথমবারের মতো বিটকয়েনের মূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে। মূলত আর্থিক নীতির সম্ভাবনার মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার নিম্নমুখী হয়ে পড়ার কারণেই এ দরপতন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাজার মূল্যের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল বিটকয়েন। শনিবার বিকেলে এর দর নেমে যায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশেরও বেশি নিচে। এতে করে এর মূল্য ১৭ হাজার ৫৯৩ ডলারে নেমে আসে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার দর গত ১৮ মাসে সবচেয়ে কমে গেছে। রেকর্ড দরপতনের আগে বিটকয়েনের মূল্য ছাড়িয়েছিল ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিটকয়েনের পাশাপাশি অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি- ইথিরিয়াম, সোলানা ও বিএনবিও ব্যাপক ধসের সম্মুখীন হয়েছে। বিটকয়েনের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথিরিয়াম। এ মুদ্রার বাজারদর এখন ১ হাজারের ঘরে। এর বাজারদরও চলতি বছরে ৭৪ শতাংশ কমে গেছে।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে প্রথমবারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির সামগ্রিক বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এ ধসের ফলে বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক মাসে একের পর এক ধসের জেরে কার্যত দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। আগামী দিনে এ ধস আরও ভযাবহ আকার নিতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
ব্যাংক অব আমেরিকা করপোরেশনের ক্রিপ্টো ও ডিজিটাল অ্যাসেটস স্ট্র্যাটেজির প্রধান আলকেশ শাহ গত শুক্রবার বলেছেন, কঠিন পরিস্থিতি হলেও এখনই আশাহত হওয়ার কিছু নেই। কারণ নগদ প্রবাহ ও লাভের পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রোড ম্যাপ তৈরি করছে বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ার বাজার ও অন্যান্য সম্পদের দরপতনের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির দরপতন সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা জানান, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আর্থিক নীতিকে ক্রমশ কঠোর করে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কোনো মৌলিক নীতি নেই এবং শেয়ার বাজারের তুলনায় ব্যাপক অস্থিরতা কাজ করে এখানে। এর ফলে একটি বাবেল বা বেলুন তৈরি হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে কেন্দ্র করে যা ফেটে যেতেই এমন ভয়াবহ পতন।
এদিকে সাময়িক দরপতন হলেও আশাবাদী ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীরা। তাদের মত, বিটকয়েন কিংবা ইথিরিয়ামের দাম প্রচুর ওঠা-নামা করে এবং একসময় সর্বোচ্চ দামে গিয়ে পৌঁছায় যা মোটা অংকের মুনাফা তৈরি করে। তাই এটিতে এখন বিনিয়োগ করার ভালো সময়। সেই সঙ্গে এ পতন থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার খুব শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে বলেও জানান তারা।
তবে বিনিয়োগকারীদের একাংশ অবশ্য বলছেন, মৌলিক নীতি না থাকায় কখনও একটি কারেন্সি সেই উচ্চতা লাভ করতে পারে না। তাই সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যত এখনও অন্ধকার।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা এবং তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে বর্তমানে এ ধরনের মুদ্রার সংখ্যা আট হাজারের বেশি এবং এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বিটকয়েন। ২০০৮ সালের শেষভাগে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামে একজন এবং একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভাবন করেন। দরপতনের আগে বিশ্বে ভার্চুয়াল এ মুদ্রার বাজার দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণে পৌঁছেছিল।
এসএন