‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সমর্থনযোগ্য নয়’
বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও সুশাসনের কথা বলা হলেও পাচার করা কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা সমর্থনযোগ্য নয় উল্লেখ করে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) এর প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেছেন, ‘মাত্র ৭ শতাংশ কর প্রদান করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে নিয়মিত করদাতাদের আরও নিরুৎসাহিত করা হবে। ঢালাও সুযোগ না দিয়ে এর সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন।’
সোমবার (১৩ জুন) জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ পর্যালোচনা ও সুপারিশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘পাচার করা টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না-এ ধরণের এমনেষ্টি (ক্ষমা) প্রদান করা হলে অর্থনীতিতে নীতি নৈতিকতার ভারসাম্য মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও চুক্তিকারীদের সঙ্গে প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বাজেটে অর্থমন্ত্রী ৬টি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের মূল্য বৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থানের কৌশল বাস্তবায়নের কোনো পথ নকশা নেই। শুধু তাই নয়, ঘোষিত বাজেটে যেভাবে করোনার শঙ্কা, অভিঘাত ও পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে বাজেটে আয়-ব্যয় বন্টনে এর প্রতিফলন হয়নি।’
আইবিএফবির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট ৬ লাখ সাড়ে ৩ হাজার কোটি থেকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ হচ্ছে- রাজস্ব আয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির কিছু সূচকের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা বাস্তব সম্মত হওয়া দরকার। পোশাকখাতের মতো সব রপ্তানি খাতে একই রকম কর আরোপ করতে হবে। বাজেটের দর্শনে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং মানুষ ও স্বাস্থের উন্নয়নের জন্য যে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে তা ঠিকভাবে পালন করতে হবে। মহামারি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা থোক বরাদ্দের টাকা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যথাযথখাতে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।’
হুমায়ুন রশিদ বলেন,‘বাজেটের বেশিরভাগ অর্থ উন্নয়নখাতে ব্যয় হয়। তাই উন্নয়ন-অনুন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নে পর্যালোচনা ও পরীক্ষণের জন্য বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা দরকার। এ কমিটি জাতীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যেমে বাজেটের যথাযথ পরীক্ষণ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে জ্বলন্ত ইস্যু হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তাই বলা যায় এটা একটা নতুন বাংলাদেশ। আগের অবস্থা আর ফিরে আসবে না। নতুন পরিস্থিতি নতুন সম্ভাবনা। তাই আশা করি অর্থমন্ত্রী অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তনে এগিয়ে আসবেন। বাজেট যাতে যথাযথ বাস্তবায়নযোগ্য হয়ে উঠে সে ব্যাপারে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরীক্ষা ও পর্যালোচনার নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ও এফবিআইবির অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর মজিদ বলেন, ‘বাজেটের আকার জিডিপির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটা আরও বাড়ানো দরকার। এটা বাস্তবায়নও সম্ভব। এজন্য রাজস্ব বোর্ডের কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে। গরিবের পকেটে টাকা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এই টাকা বাজারে চাল, ডাল কেনার জন্য ঘুরবে। এতে কর্মসংস্থান হবে। উপজেলা পর্যায়ে মৎস কর্মকর্তার অফিস থাকলেও রাজস্ব কর্মকর্তার অফিস নেই। তা করতে হবে। করের নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। এতে রাজস্ব আদায় ৩ থেকে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার প্রচলন বিশ্বের বহু দেশে আগে থেকেই আছে। কিন্তু তাদের আইন করা আছে। আর আমাদের আইনে থাকলেও মাঝেমাঝে নীতিগত কথা বলে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। অর্থবিলে যা উল্লেখ করা থাকে তা মানতে হয়।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন আইবিএফবির ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুননেসা সাদিয়া খান, লিগ্যাল ইকনোমিষ্ট এম এস সিদ্দিকী, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজালসহ অন্যরা।
জেডএ/এসজি/