উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নতুন বাজেট
কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন প্রত্যয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা, আর অন্যান্য খাত থেকে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) বিকাল ৩ টায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট উত্থাপনের আগে দুপুর ১২ টায় জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। সংসদে উপর ১৪ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ব্যতিত প্রতিদিন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ৩০ জুন সংশোধিত আকারে বাজেট পাস হবে এবং ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর কার্যকর হবে।
অর্থমন্ত্রী ১৭২ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করা হয়। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার মাঝে ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে খাত ভিত্তিক প্রজেকশন দেখানো হয়। বাজেট উত্থাপনের পর আইন অনুযায়ী সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনকল্পে আনীত বিল অর্থবিল-২০২২ সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি এবং দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্ব। সংগত কারণেই কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ উদ্ভূত অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করে দেশের সর্বস্তরের জনগণের জীবন-জীবিকা এবং সর্বোপরি ব্যাপক কর্মসৃজন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা এবারের বাজেটে প্রাধান্য পাবে।
'বিগত দুই অর্থবছরে আমরা যেভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতিকে মূল গতিধারায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলাম, অনুরূপভাবে আগামী অর্থবছরেও ইউক্রেন সংকট উদ্ভূত বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখব।'
কোভিড সংক্রমণ এড়াতে গত দুই বছর বাজেট অধিবেশন বসেছিল স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ির মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায়। সদস্যদের সবার একসঙ্গে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়নি, বাদ দেওয়া হয়েছিল অনেক আনুষ্ঠানিকতাও। এবার বেশিরভাগ কড়াকড়ি কমানো হয়েছে, তবে সংসদে ঢোকার জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ থাকা এবারও বাধ্যতামূলক।
৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে এবার উন্নয়ন ব্যয় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১২.২১ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৮ শতাংশের বেশি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৩ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ১২৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, 'চলতি অর্থবছরের মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯.৪৩ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের এ সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেটের সমান অর্থাৎ ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম যে, সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো হ্রাস করা হয়নি।'
এসএম/এএজেড