জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কী অবদান রাখবে বাজেট
একদিকে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, অন্যদিকে উন্নয়নের রোলমডেলে বাংলাদেশ। বহির্বিশ্বের নাজুক অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য স্বপ্ন দেখোনোর কোনো কিছুই যেনো নেই হাতের নাগালে। কিন্তু জনগণকে প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। যা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫১ তম এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪ তম এবং আওয়ামী লীগের ২৩তম বাজেট এটি।
এবার (২০২২-২০২৩ অর্থবছর) বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
বাজেটের আকার যাই হোক এ বাজেট ঘিরে জনসাধারণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সে প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে তাই এখন দেখার বিষয়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের এ বাজারে এবারের বাজেট হতে হবে জনবান্ধব। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কতোটুকু করা হবে সেটাই দেখার বিষয়। এসব বিষয়ে বেশি বেশি করে বরাদ্দ দিলে বলা যাবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে। এটা আমার মনে হয়।
বাজারে স্বস্থি ফেরার সম্ভাবনা আছে কী? মির্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, মূল্যস্ফীতির লাগাম বৈদেশিক পণ্য নির্ভরতার কারণেই বেশি হচ্ছে। এটার জন্য তেমন করার কিছু নেই। তবে অভ্যন্তরীণ মুদ্রানীতির মাধ্যমে সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবন যাপনে সমর্থন দিতে পারলে বাজারে স্বস্তি ফিরতে পারে।
শোনা যাচ্ছে এবারের বাজেটে ভর্তুকি ঘোষণা আসতে পারে বেশি। এ কারণে কি পরিমান ভর্তুকি আসছে সেটাই দেখার বিষয়। যেখানে যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতে বেশি করে ভর্তুকি দিতে হবে। এসব করা হলে সরকারের জন্য কিছুটা স্বচ্ছিদায়ক হতে পারে বলে মনে করেন মির্জা আজিজ।
জিডিবির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বরাবই বাজেটে থাকে নির্দেশনা। আগামীর বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হচ্ছে। এটা অর্জন করতে হলে অনেক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন মির্জা আজিজ। তিনি বলেন, ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদনমুখী শিল্পে নজর দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকার পুরোপুরি ভূমিকা রাখলে অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারে।
অপর দিকে অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, এবারের বাজেট সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কতোটুকু পূরণ হবে তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বাজেট। তাই যেভাবে হোক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাটাই বড় বিষয়। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যস্ফীতি যেভাবে বাড়ছে তাতে সরকারের করার কিছু নেই।
কৃষিক্ষেত্রে অবশ্যই ভর্তুকি বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ড. নাজনীন। তিনি বলেন, যাতে কোনোক্রমেই খাদ্য উৎপাদন কম না হয়। খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে আবার দাম বেড়ে যাবে। একইভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতেও বরাদ্দ বেশি করে বাড়াতে হবে। কারণ করোনায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসায় ফিরতে পারেনি। অনেকের ব্যবসা নষ্ট হয়েছে। অনেকে কর্মহীন ও বেকার হয়েছে।
ড. নাজনীন বলেন, করোনার ধকল মোকাবেলা না করতেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করাই বড় চ্যালেঞ্চ হয়েছে সরকারের জন্য। বিশ্বব্যাপী তাপ কমার চাপ মোকাবেলা করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তবেই কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।
সামাজিক সুরক্ষা খাতেও বেশি করে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জ্বালানি খাতেও ভর্তূতি বাড়াতে হবে। এভাবে বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়িয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে সরকারের ব্যয়ও কমাতে হবে। বিশেষ করে একেবারে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় যেভাবে হোক বন্ধ করতে হবে। বিদেশে ভ্রমণ থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরেও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করতে হবে। এভাবে সরকারকে ব্যয় সংকোচন অব্যাহত রাখতে হবে আয় বাড়ার দিকে।
বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ব্যক্তিখাতে করদাতাদের পরিমান বাড়াতে হবে। এতে করের আওতা বাড়বে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থানের বেশি করে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় যেভাবে হোক কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এভাবে ব্যয় কমিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে।’
জেড/