এখনই বাজার স্থিতিশীল হবে না: সিপিডি
করোনার ধাক্কা না সামলাতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশও উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বহু চ্যালেঞ্জে পড়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এখনই সম্ভব না। তাই সহসায় বাজার স্থিতিশীল হবে না। তবে সুচারুভাবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কঠোরভাবে চাল, ডাল, তেল ও মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
রবিবার (৫ জুন) বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনা উপলক্ষে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারও বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে চরমভাবে চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। তাই বাস্তবভিত্তিক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি দরকার। যে খাতে ভর্তুকি দরকার অবশ্যই দিতে হবে। সরকারি ব্যয়ও (এডিপি বাস্তবায়ন) বাড়াতে হবে। চলমান সংকট মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় অবশ্যই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সময় সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় কৃষি ভরসা জায়গা করে নিলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে অবদান কমে যাচ্ছে। তবে শিল্পখাতের মধ্যে বড় শিল্প কারখানার অবদান বাড়ছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এই জিডিপির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই জিডিপির হিসাব বাস্তবভিত্তিক হওয়া দরকার। তাহলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। তবে দেশে কীভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা দেখার বিষয়। কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্যই সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানসম্মত নির্ভুল তথ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ দেখা যায়, রাজস্ব আদায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনবিআর একরকম তথ্য দেয়। আর অর্থমন্ত্রণালয় দেয় আরেক রকম তথ্য। বেশি লক্ষ্য ধরে আদায় হয় না। আবার আদায় হলেও রাজস্ব ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এবারও ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে। এর ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও প্রভাব পড়ে। গতি বাড়ে না। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ, ভর্তুকি, অভ্যন্তরীণ ঋণ ও ঋণের সুদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সিপিডির মতে, মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে। কিন্তু বাজারে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে এর চিত্র সব দেখা যায় না। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। এই ভর্তুকি ব্যবস্থাপনাতেও খুব গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে পরিচালন ব্যয় খুব বেশি না হয়। আর মূল্যস্ফীতি কমাতে চাহিদা ও সরবরাহের সমন্বয় দরকার এই সংকট সময়ে। কারণ উন্নত দেশ আমেরিকায় ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে আগের দুই শতাংশ অতিক্রম করত না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, যেহেতু ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ ২৯টি নিত্যপণ্য আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এর প্রভাব আমাদের দেশেও বেড়ে গেছে। তাই নিত্যপ্রণ্যের বাজার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাজার বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিংখাতে সংস্কার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী করতে হবে। কারণ একদিকে খেলাপী বাড়ছে, অন্যদিকে মূলধন খেয়ে ফেলছে। তাই ব্যাংকিংখাতে অনিয়ম দূর করে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।
সিডিপির মতে, বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) বাজার অস্থিরতা দূর করতে হবে। ক্যাপিং তুলে বাজারে ছেড়ে দেওয়ার কথা সিপিডি আগেই বলেছিল। শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই পথে এসেছে। তাই ডলারের বাজার স্থিতিশীল হতে একটু সময় লাগছে। সময়মতো উদ্যোগ নিলে এত সময় লাগত না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
জেডএ/এসজি/