বাংলাদেশে তথ্যের নৈরাজ্য চলছে: সিপিডি
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দ্রেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য আর্থিক নীতি দরকার। সাংবাদিকতা করতে হলে আর্থিক নীতির বিকল্প নেই। কিন্তু দেশে তথ্যের নৈরাজ্য বিরাজ করছে। সরকারি কর্মকর্তারা তথ্যের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ মনোভাব দেখাচ্ছেন। তথ্যের অন্ধত্ব বিরাজ করছে। তথ্যহীনতার এই মনোভঙ্গি আধুনিকতা না। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নে আর্থিক তথ্য ও তথ্য অধিকারের ব্যবহার নিয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এশিয়া ফাউন্ডেশন, সিপিডি ও অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সদস্য দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। এই উত্তরণের পরে দেশ কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সাহায্য পেতে এ ধরনের দেশের ট্রিগার ইন্ডিকেটর থাকতে হবে। ফলে এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার পরিস্থিতি বাংলাদেশের আর্থিক তথ্যের চাহিদা শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়টি মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও কার্যকরণে তা দেখা যাচ্ছে না।' তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে প্রয়োজনীয় তথ্য সময়মত এবং পরিপূর্ণভাবে সরবরাহ করতে না পারলে সহযোগিতা মিলবে না। দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, তথ্য যে সহায়ক শক্তি হতে পারে তা সরকার বা সংশ্লিষ্টরা উপলদ্ধি করছেন না। স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে তথ্যের কার্যকারিতার আধুনিক মনোভাব দেখা যাচ্ছে না। যা উদার বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এমনকি বাংলাদেশের উন্নয়ন আকাঙ্খা অর্থাৎ করোনা অতিমারির প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, আর্থিক তথ্য সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যমনি। ঐতিহাসিকভাবে আর্থিক নীতি প্রণয়নে তথ্যের গুরুত্ব ছিলো। যখনই দেখা গেছে অর্থনীতিতে চাহিদা কমে গেছে, তখনই সরকার ব্যয় বাড়িয়ে চাহিদা সৃষ্টি করেছে। করোনার সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থের অভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশ সরকারের টাকার অভাব ছিলো না। কিন্তু ব্যয় করাই বাংলাদেশের মূল সমস্যা ছিলো। সক্ষমতার সঙ্গে সঠিক মানুষের কাছে প্রণোদনার টাকা পৌছানো সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আড়াই হাজার টাকা করে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে তার ২০ শতাংশ বিতরণ সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ সঠিক তথ্যেও ঘাটতি।
তিনি বলেন, গবেষকরা সময়মত হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছেন না। জনপ্রতিনিধিরা তথ্যেও ঘাটতিতে থাকছেন। যেকারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের কার্যক্রমে গুনগত মান মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য তথ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাজেটের আয়,ব্যয় ও ঘাটতি অর্থায়নের তথ্য সরকারি দপ্তরগুলো থেকে যেভাবে পাওয়ার কথা সেইভাবে পাওয়া যায় না। ফলে ওপেন বাজেট ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দিনদিন পেছনে পড়ছে। এক কথায় তথ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে। বাজেটে কোথাথেকে কত আয় হচ্ছে, কোথায় কত ব্যয় হচ্ছে, কাদের জন্য কত ব্যয় হচ্ছে এসব তথ্য অর্থ বিভাগ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যের বিভ্রাটও আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যে রাজস্ব আয় দেখাচ্ছে, অর্থবিভাগ দেখাচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম।
তিনি বলেন, সরকার কর ছাড়ের মাধ্যমে কত প্রণোদনা দিচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু অন্যান্য দেশে বাজেটের আগেই এই হিসাব করা হয়। সামাজিক নিরাপত্তার প্রকৃত খরচ কত তাও সরকার প্রকাশ করে না। কিন্তু সরকার যা ব্যয় করে তা পুরোটাই জনগণের অর্থ। জনগণের অর্থের হিসাব আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে থাকা উচিত বলে জানান তিনি।
কেএফ/